নবাগত
আমি বড় নায়ক হব : রিপন খান
ফিরোজ খান প্রিন্স পরিচালিত ‘শোধ প্রতিশোধ’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হতে যাচ্ছে নবাগত নায়ক রিপন খানের। ফিরোজ খান প্রিন্স বলেন, ‘এই ছবিতে নবাগত নায়ক রিপন খানের সাথে নায়িকা থাকছেন দুজন নায়িকা- মৌমিতা মৌ ও সাদিয়া আফরিন। রিপন অনেক ভালো করছে। আমি তার ব্যাপারে আশাবাদী।’ সম্প্রতি রিপন খানের সঙ্গে কথা হয়েছে এনটিভি অনলাইনের।
প্রশ্ন : ‘শোধ প্রতিশোধ’ গল্প সম্পর্কে কিছু বলুন। এটি তো আপনার প্রথম কাজ।
উত্তর : প্রথম ছবিতেই একটি মজার চরিত্র পেয়েছি। গল্পে দেখা যাবে, আমি গ্রামের ছেলে, একটা মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেম। কিন্তু নায়িকার পরিবার কিছুতেই মেনে নিচ্ছে না। একসময় তাকে জোর করে বিয়ে দিতে চায়। আমরা দুজন পালিয়ে ঢাকায় চলে আসি। কোথায় থাকব, কিছুই বুঝতে পারি না। অনেক ঘোরাঘুরির পর অবশেষে একটা চাকরি পেয়ে আমরা সুখে সংসার করতে লাগলাম।’
প্রশ্ন : নায়ক হতে চান কেন?
উত্তর : আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। একদিন রাতে মা আমাকে ঘুম পাড়ানোর সময় প্রশ্ন করল, বাবা তুমি বড় হয়ে কী হবে? আমি কিছু না ভেবেই মাকে উত্তর দিলাম, আমি বড় হয়ে নায়ক হব। মা কিছুটা অবাক হলো এবং আমাকে বলল, এত কিছু থাকতে তুমি নায়ক কেন হবে? আমি বললাম, পরিচিতি পাবার জন্য। আসলে আমি ওই সময় অনেক ছবি দেখতাম। স্কুল ফাঁকি দিয়ে হলেও ছবি দেখতাম। মিঠুন চক্রবর্তীকে ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগে। সালমান শাহর ছবি খুব দেখতাম। সিনেমা হলে গিয়ে সালমান শাহর ছবি দেখেছি আব্বু-আম্মুর সঙ্গে। সেসব স্মৃতি আজও মনে পড়ে।
প্রশ্ন : পড়ালেখা কোথায় করেছেন?
উত্তর : আমি এসএসসি দিয়েছি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার হোসাইনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার উদ্দেশে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটউটে পুরকৌশল বিভাগে পড়াশোনা শুরু করি। সেখান থেকে পাস করার পর কর্মজীবন শুরু করি এবং তার পাশাপাশি পুরকৌশল বিভাগে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করি।
প্রশ্ন : চলচিত্রের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?
উত্তর : এটা একটা খুবই মজার ঘটনা। আমি সব সময়ই সুযোগ খুঁজতাম কীভাবে মিডিয়ায় অথবা সিনেমায় সুযোগ পাওয়া যায় । সিনেমা তো অনেক বড় ব্যাপার, সাহস পেতাম না তাই নাটক করার ইচ্ছে ছিল। আমি যে কোম্পানিতে (এশিউর গ্রুপ) চাকরি করি, সেই কোম্পানির সাথে আরেকটি কোম্পানির (অ্যাডকম) ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। অ্যাডকমের সাথে আবার আমার এক কলিগের খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং সেই অ্যাডকম একটি নাটক নির্মাণ করবে। সেখানে আমার কলিগের বড় একটি চরিত্রে অভিনয় করার কথা। বিষয়টি আমি যখন জানতে পারলাম, তখন অ্যাডকমকে অনুরোধ করলাম আমাকে নেওয়ার জন্য। অনুরোধে কাজ হয়, খুব ছোট একটা চরিত্রে সুযোগ পাই। কিন্তু কী ভাগ্য দেখেন! যেদিন নাটকের শুটিং হওয়ার কথা, তার আগের দিন আমার কলিগ অ্যাডকমের নাজমুল ভাইকে জানাল, তার বড় একটি সমস্যার জন্য শুটিংয়ে উপস্থিত থাকতে পারবে না। শুটিং তো বন্ধ রাখাও যাবে না, অবশেষে অ্যাডকমের নাজমুল ভাই ওই চরিত্রে আমাকে কাজ করতে বললেন।
যথারীতি ফিরোজ খান প্রিন্স পরিচালিত ‘চাকুরি নাই চাকুরী চাই’ নাটকে প্রধান চরিত্রে সুযোগ পেয়ে গেলাম। পরে বিটিভিতে সোনার গহনা, এই তো জীবন নাটকেও কাজ করি। সেখানেও খুব ভালো করি। প্রিন্স ভাই ও নাজমুল ভাইয়ের সাথে খুব ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেল। এবং আমার কাজ দেখে তারা দুজনই খুব খুশি হন। তারপর প্রিন্স ভাই আমাকে সোহানুর রহমান সোহান স্যারের ইউনির্ভাসাল পারফর্মিং আর্টস ইনস্টিটউটে অভিনয়, ফাইট ও নাচ শেখার জন্য ভর্তি করে দেন। তখনো আমি বুঝতে পারিনি এখানে কেন প্রিন্স ভাই ও নাজমুল ভাই আমাকে ভর্তি করলেন।
ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ জামাল স্যার ও মঞ্জুর স্যারের সহযোগিতায় নিজেকে আরো পরিপাটি করে গড়ে তোলার কাজ শুরু করে দিলাম। অতঃপর নাজমুল ভাই প্রিন্স ভাইকে দিয়ে ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেন। ছবির নাম ‘শোধ প্রতিশাধ’। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে এই ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তা ছাড়া আমার কোম্পানি এশিউর গ্রুপের কর্ণধার আমার অভিভাবক শেখ সাদী এবং জাসিয়া আফরিন তাদের উৎসাহে এবং সহযোগিতায় শুরু করে দিলাম আমার প্রথম ছবি ‘শোধ প্রতিশোধ’।
প্রশ্ন : কাজ করতে কেমন লাগছে?
উত্তর : আসলে নাটক এবং সিনেমা দুটোর মাঝে বিস্তর ব্যবধান। চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি বিশাল ক্ষেত্র। এখানে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। তবে আমি এখানে ফাইটিং খুব এনজয় করছি। শোধ প্রতিশোধ ছবির গল্পের সাথে আমি মিশে গেছি তাই কাজটা নিজের মতো করে করতে পারছি। প্রিন্স ভাই আমাকে খুব সহযোগিতা করছে। তা ছাড়া শোধ প্রতিশোধ ছবির সেটের সবাই খুব আন্তরিক। সবার চেষ্টা একটাই, কীভাবে মুভিটাকে ভালো করা যায় এবং মুভিটা দেখে যেন দর্শক বলতে পারে- অনেক দিন পর নকল কাহিনীমুক্ত মুভি দেখলাম। এবং আমার বিশ্বাস এই ছবি দেখে কেউ প্রতারিত হবে না বরং তাদের টিকিটের টাকা উসুল হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : ছবিতে আপনার চরিত্রটি কেমন?
উত্তর : ছবিতে আমি অভিনেতা হওয়ার চেষ্টা করছি, এই ছবিতে গল্পের প্রয়োজনে তিনজন নায়িকা এবং দুজন নায়ক কাজ করছে। তাদের মধ্যে দুজন নায়িকা আমার সাথে কাজ করছে। বাকিটা আপনারা মুভি দেখার পর বুঝে নেবেন।
প্রশ্ন : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
উত্তর : আসলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তো অনেক কিছুই আছে। তবে শোধ প্রতিশোধ মুক্তি পাওয়ার পর দর্শক আমাকে কীভাবে নেয় তার ওপর নির্ভর করবে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। আমি দর্শকদের ঠকাতে চাই না, তারা আমাকে যেভাবে পছন্দ করবে, আমি নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলব। এবং আমি এটুকু বলতে চাই, জীবনে যতটুকু অভিনয় করব ঠিক ততটুকই যেন মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকে, ভূরি ভূরি কাজ করার ইচ্ছে আমার নেই। অনেক কাজ করেও যদি দর্শকের হৃদয়ে জায়গা না পাই, তবে সে কাজ না করাই ভালো।