নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই : শমী কায়সার
[শমী কায়সার, বাংলাদেশের খ্যাতিমান অভিনেত্রী, প্রযোজক ও নির্মাতা। তাঁর বাবা নিহত বুদ্ধিজীবী শহীদ শহিদুল্লা কায়সার ও মা পান্না কায়সার। পান্না কায়সার একজন লেখক ও সাবেক সংসদ সদস্য। শমী কায়সার বর্তমানে মিডিয়ায় খুব একটা সময় দিতে পারছেন না। দায়িত্ব পালন করছেন ব্যবসায়িক সংগঠন এফবিসিআইর পরিচালক হিসেবে। ফেনী-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান শমী কায়সার। সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজীর নবাবপুরে গ্রামের বাড়িতে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।]
প্রশ্ন : নব্বইয়ের দশকে আপনি অভিনয়ে নিয়মিত ছিলেন, তারপর ধীরে ধীরে অনিয়মিত হয়ে গেলেন, কেন?
শমী কায়সার : ২০০৩-০৪ থেকেই আমি অভিনয় করছি না। কারণ, ২০০১ সালের পর থেকেই ২০০৭-০৮ পর্যন্ত দেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে আমাদের মিডিয়ায় অস্থির ও প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ করেছিল। তখন স্বাধীনতাবিরোধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। সে সময়ে যারা প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিল; তাদের ধরে ধরে ব্ল্যাক লিস্টে আনা হলো। যেহেতু আমি প্রথম সারির একজন অভিনেত্রী ও শহীদের সন্তান হিসেবে বেশি রোষানলে পড়েছিলাম। তো ওই সময় যাতে আমরা কাজ করতে না পারি, সে রকম একটি অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। এভাবেই আমি অভিনয় থেকে দূরে সরে যাই। ২০০৯ সাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আছি। যেহেতু অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স-মাস্টার্স করেছি, তাই ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি ঝুঁকে পড়ি। তা ছাড়া দুটি কাজ একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া কঠিন ছিল। এ কারণেও অভিনয়ে আর মনোযোগ দেওয়া হয়নি।
প্রশ্ন : আপনার অভিনয় জীবনের শুরুটা কীভাবে, কেমন ছিল?
শমী কায়সার : আমি ঢাকা থিয়েটারে ১২ বছর ধরে কাজ করি। বহু বছর আগে ১৯৮৯ সালে নোয়াখালীর একটি আঞ্চলিক ভাষার নাটক ‘কেবা আপন কেবা পর’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নাটকের জীবন শুরু হয়। নাটকটি পরিচালায় ছিলেন আতিকুল হক চৌধুরী। এর পর কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস অবলম্বনে এবং আবদুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় তিন পর্বের ধারাবাহিক নাটক ‘যত দূরে যাই’-এ অভিনয় করি। ড. সেলিম আল দীনের ‘হাত হদাই’ নাটকে অভিনয় করার সুযোগ হয়। চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘দ্য নেম অব এ রিভার’ (২০০২) সিনেমায় অভিনয় করি।
প্রশ্ন : আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
শমী কায়সার : সংস্কৃতিই হচ্ছে একটি জাতির মূল পরিচয়। যেমন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তিটাই ছিল সংস্কৃতি। সংস্কৃতিবিহীন কোনো জাতি হতে পারে না। কোনো মানুষ প্রকৃত সংস্কৃতিবান না হলে প্রকৃত শিক্ষিত হতে পারে না।
প্রশ্ন : সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উদ্যোগে সরকারের ভূমিকা নিয়ে কিছু বলুন।
শমী কায়সার : আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক আদর্শের সরকার ক্ষমতায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৮ পর্যন্ত সংস্কৃতিবোধের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন।
প্রশ্ন : ফেনী শহীদ জহির রায়হান হল পুনর্নির্মাণের কথা বলে ভেঙে ফেলা হলেও এখনো কেন হলো না?
শমী কায়সার : এটি আসলে খুব দুঃখজনক বিষয় যে, এটি পুনর্নির্মাণের কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্ট লোকজন এ নিয়ে গুরুত্ব দেয়নি। তবে আমি মনে করি, বর্তমান জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিয়ে খুবই আন্তরিক। আপনি জানেন যে সাম্প্রতিককালে ফেনী শহরের এসএসকে সড়ককে শহীদ শহিদুল্লা কায়সার সড়ক করা হয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে। আমি মনে করি, বর্তমান জেলা প্রশাসক ও আমাদের ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী খুব আন্তরিক। আশা করি, শিগগিরই শুরু হবে কাজটি।
প্রশ্ন : ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআইর পরিচালক হিসেবে ফেনীতে ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি?
শমী কায়সার : ফেনী চেম্বার অব কমার্স কিংবা কোনো ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে আলাদাভাবে ওভাবে বসা হয়নি। আশা করি, সামনেই আমরা বসব। কারণ, এরই মধ্যে আমাদের ইকোনমিক জোনের কাজ শুরু হয়েছে।
প্রশ্ন : নাট্য আন্দোলন বলতে আপনি কী বোঝেন?
শমী কায়সার : নাট্য আন্দোলন একটি সম্মিলিত আন্দোলন। যখন দেশের মানুষকে ভুল ইতিহাস শেখানো হবে, তখনই নাটকের কর্মীরা এগিয়ে আসবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সেটাকে নাটকে তুলে ধরার যে আন্দোলন, সেটাই নাট্য আন্দোলন।
প্রশ্ন : আমাদের দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে কিছু বলুন।
শমী কায়সার : আমার কাছে যেটা মনে হয় যে আমাদের দেশে ভালো লেখক, গল্পকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা রয়েছে, তবে চলচ্চিত্রের জন্য আলাদা কোনো ইনস্টিটিউট নেই। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তথ্য চলচ্চিত্র অধিদপ্তরের আওতায় একটি চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট হচ্ছে। শিগগিরই গাজীপুরে এর কাজ শুরু হবে। এটি শুরু হলেই আমাদের চলচ্চিত্রে আরো বেশি পেশাদারিত্ব আসবে। আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা তৈরি হবে।
প্রশ্ন : ভারতের ছবি বাংলাদেশে প্রদর্শনের বিরোধিতা করে অনেক শিল্পী মানববন্ধন করেছেন। এটা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
শমী কায়সার : আমাদের দেশে ভিন্ন কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হতে পারবে না, এটা বোকামি কথা। সারা পৃথিবীতে যত ধরনের চলচ্চিত্র আছে, সব ওপেন করে দেওয়া উচিত বলে মনে করি। কারণ, একটি দেশের চলচ্চিত্র অন্য দেশে চললে এতে তার দেশের চলচ্চিত্রের জন্য ক্ষতি নয়, বরং ভালো হয়। প্রতিযোগিতায় কোয়ালিটি, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ে। কোয়ালিটি দেখে বাণিজ্যের জায়গাটি যেমন মজবুত হবে, তেমনি আমরা বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র দেখে নিজেরা শিখতে পারব। চলচ্চিত্রকে বাণিজ্যিক এবং প্রতিযোগিতার জায়গা থেকে ভাবা উচিত। আর আমার মুখে নিষিদ্ধের কথা বলছি, কিন্তু সারা দিনই তো ইউটিউবে বা বিভিন্ন বিদেশি চ্যানেল দেখছি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে নাটক ও চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ কী?
শমী কায়সার : বাংলাদেশে চলচ্চিত্র ও নাটকের অবস্থা একেবারেই খারাপ, এটা বলা যাবে না। সাম্প্রতিককালে অনেক ভালো কিছু চলচ্চিত্র, নাটক তৈরি হচ্ছে। অনেক নতুন নির্মাতা দেখতে পাচ্ছি, যাদের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে আমাদের দেশে যে চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট তৈরি হচ্ছে, তা অবশ্য ভবিষ্যতে ভালো কাজ হবে।
প্রশ্ন : শোনা যাচ্ছে আপনি আগামী সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ থেকে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন?
শমী কায়সার : ফেনী-৩ আসন আমার এলাকা, আমার জন্মভূমি, সে হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে আমি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই, যদি নেত্রী আমাকে যোগ্য মনে করেন। আমি জীবনের শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে যাব। আমি এলাকায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে যোগ্য মনে করে প্রার্থী করেন, তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। আমার বিশ্বাস, কাজটি আমি নিষ্ঠার সঙ্গে করতে পারব। মোটকথা, আওয়ামী লীগের বিজয় আনতেই হবে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের আওয়ামী লীগের আরো অনেক সময় ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন।