ব্যথার রকমভেদ
ব্যথা কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। আমরা যখন শরীরের কোথাও আঘাতপ্রাপ্ত হই বা রোগাক্রান্ত হই, তখনই ব্যথা অনুভব করি। এই ব্যথা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন :
১. মাস্কুলোস্কেলিটাল পেইন বা মাংসপেশি ও অস্থি-সংক্রান্ত ব্যথা
আমরা চলার পথে কোনো চোট বা আঘাত পেলে সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটি ফুলে যায়, গরম হয়ে যায়। তখন ব্যথা অনুভব করি। আবার অনেক সময় কোনো মাংসপেশি ও অস্থিতে ব্যথা হয়। এ ধরনের ব্যথাকে মাস্কুলোস্কেলিটাল পেইন বলা হয়।
২. নিউরোলজিক্যাল পেইন বা নার্ভ বা স্নায়ুজনিত ব্যথা
এটি নার্ভের আঘাত বা নার্ভের ওপর চাপজনিত ব্যথা। আমাদের মেরুদণ্ডের কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থান থেকে স্পাইনাল নার্ভগুলো রুট অনুযায়ী হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন দিকে যায়। কোনো কারণে যদি এই নার্ভের ওপর চাপ লেগে যায়, সে ক্ষেত্রে ব্যথা অনুভূত হয়, তখন এ জাতীয় ব্যথাকে নিউরোলজিক্যাল পেইন বা স্নায়ুজনিত ব্যথা বলা হয়। যেসব রোগে উপরোক্ত সমস্যাগুলো দেখা যায়, তার মধ্যে লাম্বাগো সায়টিকা, পিএলআইডি বা ডিক্স প্রলেপস অন্যতম।
৩. রিউমাটোলজিক্যাল পেইন
কিছু কিছু রোগ রয়েছে, যেগুলো অটো-ইম্যুইন ডিজিস বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বাইরে। অর্থাৎ আমাদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি রয়েছে, সেটি এই রোগগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে না। যেমন—রিউমাটয়েড, এ্যানকাইলেজিং স্পনডাইলাইটিস, স্পনডাইলো-আর্থোপ্যাথি ইত্যাদি। এই রোগগুলোতে হাত ও পায়ের বিভিন্ন জয়েন্ট আক্রান্ত হয়, ব্যথা করে। অনেক ক্ষেত্রে জয়েন্টগুলো ফুলে যায়। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় বেশি ব্যথা করে।
৪. ডিজেনারেটিভ ডিজিস বা বয়সজনিত হাড়ের ক্ষয়ের কারণে ব্যথা
এ ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেমন আমাদের চুল পেকে যায়, তেমনি হাড়েরও ক্ষয় হতে থাকে। মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয় হলে একে স্পনডাইলোসিস বলে। যেমন—সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস বা লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস, তেমনিভাবে জয়েন্টের ক্ষয়জনিত কারণে যে রোগ হয়, তাকে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বলা হয় এবং হাড় যখন ভঙ্গুর হয়ে যায় বা হাড়ের ডেনসিটি কমে যায়, তখন এই সমস্যাকে অস্টিওপোরোসিস বলে।
৫. প্যাথলজিক্যাল ডিজিস বা রোগ-সংক্রান্ত ব্যথা
এ ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে কোনো একটি জীবাণু সংক্রমণের কারণে ব্যথা হয়। যেমন—টিউমার, ক্যানসার, টিবি বা যক্ষ্মা রোগ ইত্যাদি।
৬. রেফার্ড পেইন বা স্থানান্তরিত ব্যথা
এ ধরনের ব্যথা খুবই মারাত্মক কারণ। এ ক্ষেত্রে রোগীর সমস্যা এক জায়গায়, তবে উপসর্গ দেখা দেয় অন্য জায়গায়। যেমন—একজন ব্যক্তির হাঁটুর নিচের মাংসপেশিতে ব্যথা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে কিংবা হাঁটতে পারে না। খানিক্ষণ বিশ্রাম নিলে ব্যথা কমে যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যথার কারণ অনুভব করছে পায়ে, তেমনিভাবে রোগীর সমস্যা ঘাড়ে, ব্যথা অনুভব করছে হাতে। আবার সমস্যা কিডনিতে, রোগী ব্যথা অনুভব করছে কোমরে।
তাই এই ব্যথাকে অবহেলা নয়! কী কারণে ব্যথা হচ্ছে, সেটা নির্ণয় করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথার সঠিক কারণটি নির্ণয় করে চিকিৎসা নিতে হবে।
লেখক : বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা।