কীভাবে ঈদের প্রচলিত খাবার স্বাস্থ্যকর উপায়ে রাঁধবেন?
পবিত্র রোজার পর আমাদের ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। এ সময় সবাই ভালো-মন্দ কিছু খেতে পছন্দ করে।
আমাদের দেশের প্রচলিত কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো প্রায় কমবেশি সবার বাড়িতেই হয়। কীভাবে খেলে এসব খাবার স্বাস্থ্যকর থাকবে, আর ফ্যাট ও ক্যালরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে, আজকের আলোচনা সেটি নিয়ে।
পোলাও/বিরিয়ানি
সবার বাড়িতেই ঈদের দিন পোলাও বা বিরিয়ানি রান্না করা হয়। আবার অনেকে দুটোই করে। বিরিয়ানির তুলনায় পোলাও করতে কম খাদ্য উপাদান লাগে, তাই বিরিয়ানির চেয়ে পোলাও তুলনামূলকভাবে কম ক্যালরির হয়। পোলাও তৈরিতে ঘিয়ের পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করলে ভালো। এ ছাড়া পেঁয়াজ বেরেস্তা, কিশমিশ, বাদাম পোলাওয়ের ওপর না দিলে কিছুটা ক্যালরি কমে। এগুলোর পরিবর্তে সিদ্ধ ডিম, গাজর, শসা বা জাফরান দিয়ে সাজালে অনেকটা স্বাস্থ্যকর হয়। বিরিয়ানি করলে খাসি বা গরুর পরিবর্তে মুরগি বা সবজির বিরিয়ানি করা যায়। এ ছাড়া মাছের কোফতা করেও ভিন্ন স্বাদের পোলাও করা যেতে পারে। পোলাও বা বিরিয়ানি না করে তার পরিবর্তে জিরা রাইস সবজি রাইসও থাকতে পারে ঈদের মেন্যুতে।
রোস্ট
মুরগি রোস্ট অনেকের বাড়িতেই করা হয় ঈদ মেন্যু হিসেবে। রোস্ট একটু স্বাস্থ্যকর করার জন্য খুব বড় মুরগির পরিবর্তে ছোট মুরগি নিলে ভালো। চার পিস না করে মুরগি আাট পিস করলে ক্যালরি ও প্রোটিন দুটোই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রোস্টে মাওয়া, ঘি, কনডেন্সড মিল্ক, সাদা চিনি বেশি ব্যবহার না করে টক দই, সিরকা, কিশমিশ, উদ্ভিজ্জ তেল, কাঁচামরিচ ব্যবহার করলে ভালো। স্বাদ কিছুটা কম হলেও ক্যালরি ও ফ্যাট অনেক কমনো সম্ভব। রোস্টের ঝোল খাওয়ার সময় কম খেলে ভালো।
কোরমা/রেজালা
ঈদে অনেকের প্রিয় মেন্যু হলো রেজালা বা কোরমা। ক্যালরি বিবেচনায় রেজালার চেয়ে কোরমা ভালো। কেননা কোরমা রান্না করতে মসলা ও অন্যান্য উপাদান কম লাগে। সাদা কোরমা যদি মুরগি বা মাছের হয়, তবে তা খুবই স্বাস্থ্যকর হয়। ঈদে অনেকেই শুধু মাংসের রেসিপি করে থাকে। তবে ফ্যাট ও ক্যালরির কথা ভাবলে মাছ বা ডিমের কোরমা করা যায়। সুঘ্রাণের জন্য গোলাপজল ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি মিক্স সবজি-কোরমাও মেন্যুতে রাখা যায়। তাতে ভিন্ন স্বাদ যেমন পাওয়া যাবে, সেই সঙ্গে পাওয়া যাবে সবজির গুণাগুণ।
টিকিয়া/কাবাব
গরুর মাংস সবারই প্রিয়। ঈদ মেন্যুতে গরুর মাংস উপভোগ করতে চাইলে কাবাব বা টিকিয়া করা যেতে পারে। টিকিয়া করতে মাংসের সঙ্গে সমপরিমাণ ডাল মিশিয়ে নিলে চর্বি অনেকাংশে কমে আসে। মাংসের কাবাব তৈরিতে কয়লা ব্যবহার না করাই ভালো। মাংসের পরিবর্তে মাছের কাবাব আরো বেশি স্বাস্থ্যকর হয়। কাবাবে তুলনামূলকভাবে কম তেল লাগে, তাই এই মেন্যুটি স্বাস্থ্যকর। কাবাব না করলেও গ্রিল বা বেকড করেও মাছ-মাংসের রেসিপি করা যেতে পারে।
মিষ্টান্ন
ঘরে তৈরি যেকোনো মিষ্টান্ন স্বাস্থ্যকর। কিন্তু ক্যালরি ও ফ্যাট বিবেচনায় একটু সাবধানতা অবশ্যই নেওয়া ভালো। যেমন : ফিরনির ক্ষেত্রে সাদা চিনি দিয়ে না করে গুড় দিয়ে করা ভালো। আবার ফিরনি বা দুধ সেমাই, যেকোনো একটি করা যায়। চালের জর্দায় ঘি না দিয়ে উদ্ভিজ্জ তেল দিয়ে তৈরি করতে পারেন। মাওয়া, ঘন দুধ, মোরব্বা না দিয়ে কমলার খোসা, আঙুর দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করলে কিছুটা ক্যালরি কমে। দই হতে পারে সবচেয়ে ভালো মিষ্টান্ন। এ ছাড়া মিষ্টান্নের প্রস্তুতিতে ডুব তেলে ভাজা ও সিরায় ভেজানোর বিষয়গুলো এড়িয়ে চললে ভালো। মিষ্টান্ন ছোট ছোট বাটির মধ্যে পরিবেশন করলে খাওয়ার পরিমাণ কম হয়, তাতে ক্যালরি কম গ্রহণ হয়।
পুষ্টিকে মাথায় রেখে তৈরি করুন ঈদ মেন্যু। এটি আপনাকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।