বুড়ো বয়সের কিছু অভ্যাস হতে পারে ক্ষতির কারণ
যেকোনো অভ্যাস গড়ে তোলা সহজ, বিশেষ করে সেটি যদি বদ অভ্যাস হয়। একই জিনিস প্রতিদিন করতে অনেক সময় আরামই লাগে। কিছু কিছু অভ্যাস, যা বয়স্ক লোকের মধ্যে হলে হতে পারে স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ।
নখ কামড়ানো
এ নিয়ে হয়তো ভাবছেন না। কিন্তু সময় কাটানোর জন্য নখ কামড়ানো ভালো অভ্যাস নয়। অনেকে সাধারণত দুশ্চিন্তার কারণে বা চাপ উপশমের উপায় হিসেবে এটি করেন। হয়তো ভাবতেই পারবেন না, কতবার নখ কাটছেন।
দেখা যায়, নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি করেন এটি। এই ছোট্ট তুচ্ছ অভ্যাসটি তাহলে কীভাবে এত ক্ষতি করে স্বাস্থ্যের?
দাঁত দিয়ে নখ কাটা একটি কদর্য অভ্যাস তো বটেই, নখে ঘটতে পারে বিকৃতি, দাঁতের বাইরের স্তরের হতে পারে ক্ষতি। নখের নিচে ক্ষতিকর জীবাণু থাকে। দাঁত দিয়ে নখ কাটার সময় এগুলো গিলে ফেলায় দীর্ঘমেয়াদি অসুখ হতে পারে। হতে পারে বমি, পেটে কৃমি, জীবাণু সংক্রমণ, এমনকি রক্তদূষণও।
এই অভ্যাস কী করে তাড়ানো যায়? প্রতি সপ্তাহে ম্যানিকিউর করা বা তেতো কোনো জিনিস নখে লাগাতে হবে। এতে নখ কামড়াতে খারাপ লাগে। আর দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ মোকাবিলা কঠিন হলে মনোচিকিৎসকের কাছে যান।
চিকিৎসকের কাছে মিথ্যা বলা
অনেকে নিজেকে পরীক্ষিত হতে দেন না, বিশেষ করে চিকিৎসকের কাছে। ওষুধ খাওয়া নিয়ে অনেকে চিকিৎসককে মিথ্যা বলে থাকেন বা কী সমস্যা হচ্ছে, সেটিও লুকাতে চান।
বুড়ো বয়সটা সমস্যার কারণ। এ বয়সে অনেকে ব্যবস্থাপত্রে দেওয়া অনেক ওষুধ একসঙ্গে গ্রহণ করেন। এটি পরস্পর বিরূপ ক্রিয়া করতে পারে। তাই কী কী ওষুধ খাচ্ছেন, এ ব্যাপারে মিথ্যা বলা উচিত নয় চিকিৎসকের কাছে। এতে ভুল রোগ নির্ণয় হতে পারে, ওষুধের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়, অন্যাবশ্যক পরীক্ষা করাতে হয়।
সব সময় চিকিৎসককে বলবেন, কী সাপ্লিমেন্ট অনুসরণ করছেন, কেমন বোধ করছেন, স্বাস্থ্যের পুরো হাল জানাবেন।
সহজ উপায় হলো, সমস্যাগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে ফেলা, যাতে কোনো কিছু বাদ না যায়।
ভালো ঘুম হচ্ছে না
হয়তো গতকাল রাতে প্রিয় একটি সিনেমা দেখে রাত কেটেছে। তবে যদি এটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়, তাহলে সমস্যা। বুড়োদের মধ্যে ঘুমের ঘাটতি বড় সমস্যা।
বেথ ইসাবেল ডেকনেস মেডিকেল সেন্টার বোস্টনের গবেষকরা দেখছেন, কেন বয়স্কদের রাতে ঘুমের ঘাটতি হয়, অনিদ্রা ও রাতে জেগে থাকা, ভাবনার পাখা মেলে রাত কাটানো কেন হয়? আসলে এ সময় মগজের কোষগুলো কমে যেতে থাকে। মগজের কোষ ঘুমের সমস্যার সঙ্গে জড়িত।
ঘুমের ঘাটতি হওয়ায় দিনে ঢুলুঢুলু ভাব হয়। কাজে মনোযোগ থাকে না। শেখার ক্ষমতা কাজে দিলেও একে শেষ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। নিজে বিহ্ববল ও হতবাক হয়ে যান। তবে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ।
কীভাবে হবে ঘুম? যদি টিভি, কম্পিউটার ও প্রযুক্তি অনিদ্রার কারণ হয়, তাহলে শুতে যাওয়ার অন্তত ৬০ মিনিট আগে সুইচ অফ করুন। এটি মনকে স্বস্তিতে রাখবে, আরাম লাগবে। শরীর-মনে প্রস্তুতি শুরু হবে ঘুমানোর। নিশ্চিত হবেন যে শোবার ঘরটি গাঢ় অন্ধকার, তামপাত্রা স্বস্তিকর, শীতল।
লেখক : অধ্যাপক ও ডিরেক্টর ল্যাব সার্ভিস, বারডেম।