শীতে পানি কম পান করছেন?
গরমের সময় নিয়মিত পানি পান করলেও শীতকালে আমরা ভুলে যাই পানি পানের কথা। শীত এলেই পানি খেতে যেন আর ভালো লাগে না আমাদের। চা, কফি ইত্যাদি পানীয় গ্রহণের মাত্রা বেড়ে গেলেও পানি পানের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে শরীরে নানা সমস্যা হতে পারে। যেমন- ডিহাইড্রেশন, বদ হজম, মাথাব্যথা ইত্যাদি। তাই শীতের সময়েও নিয়মমাফিক পানি পান করা প্রয়োজন। কেননা এ সময় শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে। পানি শরীরের হজম শক্তি বাড়াতে এবং শক্তির মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ঠান্ডার সময় বা শীতকালে দরকার হলে পানি কুসুম গরম করে পান করুন। কিন্তু পানি পান করা কমিয়ে দেওয়া যাবে না।
পানি পান কেন জরুরি
পানি আমাদের শরীরের বিভিন্ন অসুখ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি মাথাব্যথা সারাতে কাজ করে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ত্বক ভালো রাখে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
পানি পান না করলে কী হতে পারে
• শক্তির মাত্রা হ্রাস : শরীরে পানিশূন্যতার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরে শক্তির মাত্রা হ্রাস পায়।
• হতাশা : পানির অভাবে হতাশ বা ক্রনিক ফেটিগ সিনড্রোম দেখা দিতে পারে।
• মাথাব্যথা : মাথাব্যথার একটি বড় কারণ পানি পান না করা।
• কোষ্ঠকাঠিন্য : কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার একটি বড় কারণ পানি পান না করা। বেশি পানি ও ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমবে। হজমের জন্য পানি খুবই জরুরি। গ্যাস্ট্রাইসিস, বুক জ্বালা অনেকটা কমে যায় নিয়মিত পানি খেলে।
• শ্বাসকষ্ট হলে : শ্বাসকষ্ট হলে পানি পান করলে আরাম পাওয়া যায়। পানি ফুসফুসকে আর্দ্র করে শ্বাস নিতে সাহায্য করে।
• শরীরের বর্জ্য পদার্থ বের করে : পানির সাহায্য নিয়ে কিডনি আমাদের শরীরের বর্জ্য পদার্থ ইউরিক এসিড, ইউরিয়া ও লেস্টিক এসিড বের করে দেয়। এসব পদার্থ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
• রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস : পানি আমাদের শরীরের গাঁট গুলিতে লুব্রিকেন্টের কাজ করে। বিশেষত যখন আমরা নড়াচড়া করি। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমে যায় পরিমাণমতো পানি পান করলে।
• পানিশূন্যতা : খুব কম পানি পান করলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পানিশূন্যতার ফলে শরীর তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না। পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো হলো- তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়া, অত্যধিক পানির পিপাসা, মুখের ভেতরে শুকনো ভাব, মাথাব্যথা এবং মাথা ঘোরা, পেশির দুর্বলতা, শরীরের সামগ্রিক দুর্বলতা। এসব লক্ষণে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া প্রয়োজন।
কতটা পানি পান করবেন
একজন মানুষের দিনে কতটুকু পানি গ্রহণ করা উচিত তার নির্দিষ্ট কোনো পরিমাপ নেই। তবে আপনার স্বাস্থ্য, দৈনন্দিন কাজের ওপর নির্ভর করবে কতটা পানি দিনে পান করবেন। সাধারণ অবস্থায় একজন পুরুষের দৈনিক তিন লিটার বা ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন। নারীর দুই লিটার বা আট থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন। এ ছাড়া গর্ভকালীন অবস্থায় বেশি পানি পান করতে হবে।
দৈনন্দিন জীবন-যাপনে
• সারা দিন এক বোতল পানি সঙ্গে রাখুন।
• খাবার আগে অন্তত এক গ্লাস পানি পান করুন। এতে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ওজন কমাতে সাহায্য করবে। খাবার খাওয়ার আধঘণ্টা পর আরো এক গ্লাস পানি পান করুন।
• বারবার কফি বা চা, ব্রেক না নিয়ে ডাবের পানি বা লেবুর শরবত খান।
• নির্দিষ্ট মাপের বোতল থেকে পানি খান তাহলে দিনে কতটুকু পানি খেলেন তার পরিমাপ বোঝা যাবে।
ডা. সাবিকুন নাহার : প্রভাষক, কুমুদিনী ওমেনস মেডিকেল কলেজ