জোনাকি আলো জ্বালে কী করে
জোনাকি পোকা নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। সাহিত্যে জোনাকি পোকা দিয়ে কত উপমা! জ্বলজ্বল করার ক্ষমতা জোনাকি পোকাকে করেছে অনন্য। জোনাকির এই স্বপ্রভ ক্ষমতা বিজ্ঞানীদেরও আকৃষ্ট করেছে। বিজ্ঞানে এই বিষয়টিকে সাধারণভাবে বলা হয় জৈবপ্রভা (Bioluminescence)। এর রসায়নটা কী তবে? জোনাকি পোকার আলো তৈরির ক্রিয়াকৌশল (mechanism) নিয়ে গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। এরই মধ্যে অবশ্য এর মূল রসায়নটা জানা গেছে। সহজ করে ব্যাখ্যা করলে বিষয়টা দাঁড়ায় এমন-জোনাকি পোকার কোষে লুসিফেরিন (luciferin) নামের অণু থাকে। সেই অণু, অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে অক্সিলুসিফেরিন নামের একটি অণু তৈরি করে। লুসিফেরিন থেকে অক্সিলুসিফেরিন (oxyluciferin) রূপান্তরের বিক্রিয়ায় সাহায্য করে একটি এনজাইম। এনজাইমটির নাম লুসিফিরেজ (enzyme luciferase)। প্রকৃতিতে শক্তির বহুমাত্রায় রূপান্তর সম্ভব। আমার যে জোনাকের আলো দেখি তা মূলত এই রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে উৎপন্ন শক্তি (hv)।
জোনাকি, সমগ্র প্রক্রিয়াটি খুব নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। প্রকৃতি, প্রাণীদের মধ্যে অসম্ভব সুন্দর বৈচিত্র্য ছড়িয়ে রেখেছে। দারুণ বিষয় হলো এই আলোকশক্তি বৈদ্যুতিক আলোকশক্তির মতো নয়। ফলে প্রচুর তাপশক্তি উৎপন্ন হয় না এবং জোনাকি প্রচণ্ড তাপ অনুভব করে না। প্রকৃতিতে এমন ঘটনা বিরল নয়। আমরা ফসফরাস নামের একটি মৌলের নাম জানি। ফসফরাসের আদি নাম ছিল Icy noctiluca—Cold night light। বিশুদ্ধ ফসফরাস বাতাসের সংস্পর্শে জ্বলে ওঠে এবং প্রচুর আলো তৈরি হয়। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটিকে একটি কাচের জারে নিয়ে যদি করা হয়, তাহলে কাচের জারটি দুই হাতের তালুতে ধরে রাখা যায়। কারণ, জারটি খুব গরম হয় না বরং কিছুট ঠান্ডা হয়ে যায়। সকল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শক্তি, তাপশক্তি উৎপন্ন করে না। জোনাকির কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি ঠিক সুনির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের, যেটি আলোকশক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে কিন্তু তাপশক্তিতে নয়। অনন্য বৈশিষ্ট্য ছাড়া কি আর এত চমৎকার রসায়ন হয়!
লেখক : গবেষক, জৈব রসায়ন, স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেন