নোবেল পুরস্কার কী করে এলো
তোমরা হয়তো নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে জানো। নোবেল পুরস্কার হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার। সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে প্রতিবছর ছয়টি ক্যাটাগরিতে বিশ্বসেরাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তোমরা তো শুনেছ, আলফ্রেড নোবেল সর্বপ্রথম বিস্ফোরক ডিনামাইট আবিষ্কার করেন। ডিনামাইট বিক্রি করে তিনি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হন। কিন্তু ডিনামাইট যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এর ভয়াবহতা দেখে তিনি শঙ্কিত হন। বিজ্ঞানের আবিষ্কার যাতে মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়, সে লক্ষ্যে বিজ্ঞানীদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি পুরস্কার প্রদানের কথা চিন্তা করেন। তাই তিনি তাঁর সম্পদের ৯৪ শতাংশ এই কাজের জন্য উইল করে যান। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা। নোবেল সাহেব ১৮৯৫ সালের দিকে উইলগুলো করে যান, তবে পুরস্কার প্রদান দেখে যেতে পারেননি। তিনি ১৮৯৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯০১ সাল থেকে।
বর্তমানে মোট পাঁচটি ক্যাটাগরিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। সেগুলো হলো : শান্তি, চিকিৎসাশাস্ত্র, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও সাহিত্য। মানবকল্যাণমূলক কাজ, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সফল এবং অনন্যসাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য এসব পুরস্কার দেওয়া হয়। যাঁরা নোবেল পুরস্কার পান, ইংরেজিতে তাঁদের নোবেল লরিয়েট বলা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তররা একটি স্বর্ণপদক, একটি সনদ ও নোবেল ফাউন্ডেশন কর্তৃক মোটা অঙ্কের অর্থ পেয়ে থাকেন। ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলেও অর্থনীতি নোবেল পুরস্কারের তালিকায় যোগ হয় ১৯৬৯ সাল থেকে। নোবেল তাঁর উইলে অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে যাননি। অর্থনীতির এই পুরস্কার চালু করে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সর্বপ্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কার পান আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়নের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফেদ্রিক পাসি ও রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ডুনান্ট। এক্স রশ্মি আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান রনজেন। রাসায়নিক তাপগতিবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করার জন্য রসায়নে পুরস্কৃত হন ভন হফ। সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান কবি সুলি প্রুধম। ডিপথেরিয়া প্রতিরোধক তৈরি করে চিকিৎসায় প্রথম নোবেল পান জার্মান চিকিৎসক ও অনুপ্রাণবিজ্ঞানী এমিলি ভন বেরিং। ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হলে প্রথম এই পুরস্কার জেতেন জান টিনবার্গেন ও রাঙ্গার ফ্রিস। প্রতিবছর নিয়মিত পুরস্কার দেওয়া হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে চারজন ব্যক্তি দুবার করে নোবেল পুরস্কার পেয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁরা হলেন : মেরি কুরি (পদার্থবিজ্ঞানে ১৯০৩ সালে ও রসায়নে ১৯১১ সালে), লিনাস পাউলিং (রসায়নে ১৯৫৪ সালে ও শান্তিতে ১৯৬২ সালে), জন বারডিন (পদার্থবিজ্ঞানে ১৯৫৬ ও ১৯৬২ সালে), ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার (রসায়নে ১৯৫৮ ও ১৯৮০ সালে)। বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ড. মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
সারা পৃথিবী থেকে তিন হাজার বিশেষ ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা হয়, যাঁরা নোবেল পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারেন। ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়। সেখান থেকে নোবেল কমিটি সম্ভাব্য ৩০০ জনকে নির্বাচন করে এবং তাঁদের ডাটা নোবেল পুরস্কার প্রদানের সংস্থাগুলোকে পাঠানো ও সংরক্ষণ করা হয়। তারপর ভোটের মাধ্যমে বিজয়ীকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়। একটি পুরস্কার সর্বোচ্চ তিনজনকে দেওয়া হয়। তা ছাড়া এ পুরস্কারের জন্য অবশ্যই ব্যক্তিকে জীবিত থাকতে হবে।
১০ অক্টোবর নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকী। তাই প্রতিবছর এই দিনকে কেন্দ্র করেই পুরস্কার প্রদানের আনুষ্ঠানিকতার পরিকল্পনা করা হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান অসলো সিটি হলে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যগুলো প্রদান করা হয় স্টকহোম কনসার্ট হলে।