প্রাচীন যুগের ১০ বিস্ময়কর স্থাপনা
প্রাচীন থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত মানুষ যুগে যুগে দেশে দেশে অসামান্য সব স্থাপনা গড়েছে। সেগুলোর আকার-আকৃতি, নকশা, সৌন্দর্য আর নির্মাণকৌশল সবাইকে অবাক করে দেয়। সে সময়ের সীমিত যন্ত্রকৌশলে এমন সব অবকাঠামো নির্মাণ কীভাবে সম্ভব হয়েছিল, সে এক রহস্য বটে। এগুলোর মধ্যে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের স্থাপনাগুলো নিয়েই কথাবার্তা হয় বেশি। অথচ এমন বিস্ময়কর সব স্থাপনা ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর সবখানে। ওয়ান্ডারলিস্ট ওয়েবসাইটে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বাইরের এমনি ১০টি বিস্ময়কর স্থাপনার কথা জানানো হয়েছে।
১. মাচু পিচু
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আট হাজার ফুট ওপরের এই শহর ইনকা সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে। পেরুর উরুবাম্বা ভ্যালির চূড়ায় অবস্থিত শহরটির আরেক নামই হলো ‘ইনকাদের হারানো শহর’। ইনকারা মাচু পিচু শহর গড়ে তোলে ১৪৫০ সালের দিকে। তখন ইনকা সভ্যতার রমরমা অবস্থা। অবশ্য শখানেক বছরের মধ্যেই, ১৫৭২ সালে স্প্যানিশদের আক্রমণে শহরটির পতন ঘটে।
২. ইৎজাদের চিচেন
মেক্সিকোতে অবস্থিত এই চিচেন মূলত ‘মায়া’ সভ্যতার স্থাপনা। খ্রিস্টের জন্মের ৪০০ বছর আগে এই চিচেন বানিয়েছিল মায়াদের ‘ইৎজা’ গোত্র। চিচেন নিয়ন্ত্রণ করতেন ইৎজা পুরোহিতরা। ওদের প্রায় সব উৎসব-অনুষ্ঠানের কেন্দ্রই ছিল এটি। ওদের ভাষায় চিচেন অর্থ ‘কুয়ার মুখ’। সেই মুখে ওরা স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করতে মানুষ উৎসর্গ করত। যারা সেখান থেকে বেঁচে ফিরে আসত, তারা ঋষির সম্মান পেত।
৩. কলোসিয়াম
‘রোমান’ সাম্রাজ্যের অন্যতম সেরা স্থাপনা এই কলোসিয়াম। এটি আসলে এক দৈত্যাকৃতির অ্যাম্ফিথিয়েটার। বানানো হয়েছিল রোমান সাম্রাজ্যের ‘ফ্ল্যাভিয়ান’ যুগে। এখানে আয়োজন করা হতো গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াই, নাটক, পশুশিকার, নকল সাগরের-লড়াই ইত্যাদি। সোজা কথায়, এটি ছিল সে সময়ের রোমানদের বিনোদনের কেন্দ্রস্থল।
৪. অ্যাংকর ভাট
‘খেমার’ সভ্যতার সাক্ষী হয়ে কম্বোডিয়ায় এখনো টিকে আছে অ্যাংকর ভাট। মন্দির হিসেবে তো বটেই, ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবেই এটি পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়। বানানো হয় খ্রিস্টপূর্ব ৮০২ থেকে ১২২০ অব্দের মধ্যে। এই অ্যাংকর ভাটে একশরও বেশি পাথরের স্থাপনা আছে। সবকটিই অবশ্য মন্দিরের অংশ নয়। কিছু স্থাপনা প্রশাসনিক ও সামাজিক নানা কাজেও ব্যবহৃত হতো।
৫. আলহামরা
ইসলামী স্থাপত্যের এই অনন্যনিদর্শনটির অবস্থান স্পেনের আন্দালুসিয়া প্রদেশের গ্রেনাডায়। ৮৮৯ সালে এটি বানিয়েছিলেন তখনকার দক্ষিণ স্পেনের শাসক মুরিষ, দুর্গ হিসেবে। পরে ১৩৩৩ সালে গ্রেনাডার সুলতান প্রথম ইউসুফ একেই তাঁর রাজপ্রাসাদ বানান। আরো পরে ষোড়শ শতকের ইসলামী শাসকরা একে তাঁদের খাসমহল বানান। তখন তাঁরা দুর্গটির কাঠামোতেও বেশ কিছু পরিবর্ধন ও সংযোজন করেন।
৬. নয়েসোয়ানস্টাইন ক্যাসল
আঠারো শতকের জার্মানির ব্যাভারিয়ার খেয়ালি রাজা ‘দ্বিতীয় লুডভিগ’ রাজ্যশাসনের চেয়ে শিল্প-সাহিত্য-স্থাপত্যের প্রতিই উৎসাহী ছিলেন বেশি। তিনি প্রাসাদ-দুর্গ বানাতে, এমনকি প্রচুর ধারকর্জও করেছিলেন। সেগুলোর সেরা এই নয়েসোয়ানস্টাইন দুর্গ। অবস্থান দক্ষিণ ব্যাভারিয়ার ফুসেন শহরের হোহেনসোয়ানগাউ গ্রামের এক পাহাড়ের ওপর। অবশ্য এর কাজ শেষ হওয়ারে আগেই, ১৮৮৬ সালে মারা যান তিনি। পরে অনেক কিছু না বানিয়েই ১৮৯২ সালে দুর্গটির কাজ শেষ করা হয়।
৭. কিয়োটোর স্বর্ণমন্দির
জাপানের কিয়োটোতে অবস্থিত এই মন্দিরের স্থানীয় নাম ‘কিনকাকু-জি’। ১৩৯৭ সালে জাপানের তৎকালীন শাসক তৃতীয় সোগান ‘আশিকাগা ইয়োসিমিৎসু’ এটি বানিয়েছিলেন মূলত বাগানবাড়ী হিসেবে। পরে তাঁর ছেলে এটিকে জেন বৌদ্ধমন্দিরে রূপান্তরিত করেন। মন্দিরটির ওপরের দুই তলা পুরোই সোনায় মোড়ানো।
৮. কিয়োমিজু-দেরা
এটিও জাপানের কিয়োটো শহরের একটি বৌদ্ধমন্দির। ইউনেস্কো কিয়োটোর ১৭টি মন্দিরকে একত্রে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই মন্দির সেগুলোর একটি। মন্দিরটি প্রথম বানানো হয় ৭৯৮ সালে। তবে এখনকার যে স্থাপনাটি, সেটি বানানো হয়েছিল পরে, ১৬৩৩ সালে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, এই স্থাপনাতে কোনো পেরেকই ব্যবহার করা হয়নি!
৯. অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির
ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসরের এই স্বর্ণমন্দির শিখদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় স্থান। স্থানীয়দের কাছে মন্দিরটি পরিচিত ‘দরবার সাহেব’ বা ‘হারমান্দার সাহেব’ নামে। মন্দিরটির চূড়া পুরোটাই সোনা দিয়ে বানানো। চারপাশের কৃত্রিম লেকে আছে হাজার হাজার মাছ। চারপাশে চারটা প্রবেশদ্বার রাখা হয়েছে উদারতার প্রতীক হিসেবে।
১০. পিসার হেলানো টাওয়ার
ইতালির পিসা শহরের এই টাওয়ার জগদ্বিখ্যাত একটা নির্মাণ ত্রুটির জন্য। এটি মূলত পিসার বিখ্যাত ক্যাথেড্রালের বেল টাওয়ার। বেল টাওয়ারটা যেখানে বানানো হয়, তার মাটি একদিকে একটু নরমই ছিল। কাজ শুরুর পর থেকেই তাই টাওয়ারটি একদিকে ঝুঁকতে থাকে। ১১৭৩ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও হেলতে থাকা কমেনি! পরে অবশ্য টাওয়ারটির হেলে পড়া থেমেছে। তদদিনে এই ‘হেলে পড়ার’ জন্যই কিন্তু নামডাক যা হওয়ার হয়ে গেছে!