স্ফিংসের অজানা তথ্য
বিশ্বজুড়ে নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রাচীন যুগের অসামান্য সব কীর্তি। এদের মধ্যে কয়েকটি খুবই পরিচিত, কয়েকটি আবার একরকম লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে। বহুল পরিচিত ঐতিহাসিক কীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মিসরের স্ফিংসের মূর্তি।
জেনে নেওয়া যাক নীল নদের কাছে মরুভূমির ভেতরে অবস্থিত এই বিশ্বজোড়া খ্যাতিসম্পন্ন মূর্তিটির ব্যাপারে কিছু অজানা তথ্য। এসব তথ্য নেওয়া হয়েছে স্যাক্রেডসাইট ডটকম থেকে।
১. স্ফিংস তৈরি করা হয়েছিল প্রায় চার হাজার বছর আগে। গোটা মূর্তিটি মাত্র একটি চুনাপাথর কেটে তৈরি করা হয়েছিল যার দৈর্ঘ্য ছিল ৭৩ মিটার এবং উচ্চতা ছিল ২০ মিটার। পৃথিবীতে একটি পাথর কেটে যত ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে তার মধ্যে স্ফিংস বৃহত্তম। মূর্তিটি পূর্বমুখী, উদীয়মান সূর্যের দিকে মুখ করে বানানো হয়েছে। অনেকে অবশ্য এর নির্মাণকাজ ১০ হাজার বছর আগে হয়েছিল বলে ধারণা করেন।
২. ১৯২৫ সালের আগ পর্যন্ত স্ফিংসের গোটা দেহটি দেখতে কেমন তা কেউ জানত না। মুখমণ্ডল ছাড়া সবটাই বালুতে ডুবে গিয়েছিল। যদিও প্রায় তিন হাজার ৬০০ বছর আগে ফারাও থুতেমাস ও ফারাও রামসেস মূর্তিটি সংস্কার করেছিলেন। ১৯২৫ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত এমিল বারেজ নামক এক ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ চালিয়ে স্ফিংসকে বালুর অভিশাপ থেকে মুক্ত করেন।
৩. মিসরের এটিই একমাত্র ভাস্কর্য, যাতে কোনোরূপ কারুকার্য বা কোনো লিপি খোদাই করা নেই। কাজেই কে এই বিশাল মূর্তিটি বানিয়েছিলেন তা আজও কেউ জানে না। অনেক ফারাও খাফ্রেকে এই কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন, তবে এর বিশেষ কোনো ভিত্তি নেই।
৪. অনেকে ‘স্ফিংস’ বলতে মিসরের এই ভাস্কর্যটিকেই চিনে থাকেন। আদতে কিন্তু স্ফিংস একটি পৌরাণিক গ্রিক দানবের নাম। এর মাথা ছিল মানুষের, দেহ সিংহের এবং ঈগলের মতো দুটি পাখা ছিল। মিসরীয় স্ফিংসের অবশ্য কোনো পাখা নেই। বহু প্রাচীন গ্রিক ও মিসরীয় স্থাপত্যে স্ফিংসের ছোট আকারের মূর্তি পাওয়া গিয়েছে।
৫. স্ফিংসের নাক নেই। আগে ধারণা করা হতো, ১৭৯৮ সালে মিসর জয় করার পর ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের সৈন্যরা কামান ছুড়ে এর নাক ধ্বসিয়ে দেন। অনেকে আবার মিসরীয় শাসক মামলুকদের দোষ দেন। তবে আল মাক্রিজি বা আল রশীদের মতো আরব ঐতিহাসিকরা মনে করেন, মোহাম্মদ সাইম আল দ্বাহর নামের এক গোড়া মুসলমান স্ফিংসের নাক ধ্বংস করেন। কারণ ওই অঞ্চলের লোকেরা স্ফিংসকে নানা বস্তু উপঢৌকন দিত, ভালো ফসলের আশায়। পরে মূর্তিটির বিকৃতি ঘটানোর অপরাধে ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকেরা মোহাম্মদ সাইমকে হত্যা করে।
৬. অনেক গবেষক ধারণা করেন, স্ফিংসের মুখের আদল অনেকটা আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে যায়। তবে এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে।