দীর্ঘ ও অল্পদিনের শাসকদের কথা
সেই আদিকালের রাজা-বাদশা থেকে শুরু করে হালের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীরা দেশ শাসন করে আসছেন। তাঁদের কারো কারো শাসনকাল খুবই অল্প সময়ের জন্য ছিল, আবার কারো কারো শাসনকাল ছিল দীর্ঘদিনের, কয়েক দশকব্যাপী।
আসুন দেখা যাক, বিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আর সবচেয়ে অল্প সময় ক্ষমতায় থাকা কয়েকজন শাসকের পরিচয়। এসব তথ্য পাওয়া গেছে বিজনেস ইনসাইডার ও জিরোহেডজ ডটকম থেকে।
ফিদেল কাস্ত্রো (কিউবা)
শাসনকাল ৫২ বছর ৬২ দিন (১৯৫৯-২০১১)
মাত্র ৮২ জন সঙ্গীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট স্বৈরাচারী বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লব শুরু করেছিলেন কাস্ত্রো। পাঁচ বছর যুদ্ধ চালিয়ে ১৯৫৯ সালে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন তিনি। নানা সময় কিউবান কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট পদে থেকে মোট ৫২ বছর কিউবা শাসন করেন সমাজতান্ত্রিক এই নেতা।
তাঁর শাসনকালে কিউবা, নিকারাগুয়ার বিপ্লব ও অ্যাঙ্গোলার স্বাধীনতা আন্দোলনে সমর্থন দেয়। এ ছাড়া চিকিৎসা ও অর্থনৈতিক খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে দেশটি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১১ সালে ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেন ফিদেল। বলা যায়, বৈশ্বিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের শেষ জীবিত প্রতিভূ তিনি।
চিয়াং কাই শেক (চীন)
শাসনকাল ৪৬ বছর ৮২ দিন (১৯৩১-১৯৭৫)
১৯৩১ সালে জাপানকে পরাস্ত করে চীনের ক্ষমতা দখল করে বসেন এই গোঁড়া জাতীয়তাবাদী নেতা। তবে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে চীনা সমাজতান্ত্রিক দলের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। ১৯৪৯ সালে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে যুদ্ধে হেরে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন তাইওয়ানে। সেখানেই ‘প্রজাতন্ত্রী চীন’ নামে আরেকটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ১৯৭৫ সাল অবধি শাসন করেন। এখনো তাইওয়ান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে আছে।
কিম ইল সাং (উত্তর কোরিয়া)
শাসনকাল ৪৫ বছর ৩০২ দিন (১৯৪৮-১৯৯৪)
১৯৪৮ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় ক্ষমতায় আসেন এই সমাজতন্ত্রী নেতা। তাঁর শাসনামলে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার থেকে এগিয়ে ছিল। সমাজতন্ত্রের সঙ্গে কোরীয় জাতীয়তাবাদের সংমিশ্রণে ‘জুচে’ মতবাদের প্রতিষ্ঠা করেন কিম সাল ইং, যা আজও উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় মতাদর্শ। ১৯৯৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন এই একনায়ক।
ইউমজাগিন তেসেদেনবাল (মঙ্গোলিয়া)
শাসনকাল ৪৪ বছর ১৩৭ দিন (১৯৪০-১৯৮৪)
চেঙ্গিস খানের জন্মস্থান, এ ব্যতীত বিশ্ব রাজনীতিতে মঙ্গোলিয়ার কোনো হদিসই পাওয়া যায় না বলা চলে। সংগত কারণেই অনেকে তেসেদেনবালকে চেনেন না। সমাজতন্ত্রী এই নেতা মঙ্গোলিয়া শাসন করেছেন প্রায় ৪৪ বছর।
মুয়াম্মার গাদ্দাফি (লিবিয়া)
শাসনকাল ৪১ বছর ৩৫৬ দিন (১৯৬৯-২০১১)
১৯৬৯ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মাত্র ২৭ বছর বয়সে লিবীয় সেনাবাহিনীর অফিসার মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতা দখল করেন। প্রথমে আরব জাতীয়তাবাদ এবং পরে এক ও অখণ্ড আফ্রিকার প্রচার চালিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিত পান তিনি। লিবিয়ার তেলসম্পদ ব্যবহার করে লিবিয়াকে পরিণত করেন উত্তর আফ্রিকা তথা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্রে, নিজেও কামিয়ে নেন কোটি কোটি ডলার।
বিশ্বের ইতিহাসে গাদ্দাফি অমর হয়ে থাকবেন তাঁর অতুলনীয় ব্যঙ্গাত্মক সব মন্তব্য, অদ্ভুত জীবনাচরণ আর পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর সমালোচনার কারণে। ২০১১ সালে পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত এক গৃহযুদ্ধে নিহত হন এই আরব নেতা।
সিয়াকা স্টিভেন্স (সিয়েরা লিয়ন)
শাসনকাল ৩০ মিনিট
১৯৬৭ সালে সিয়েরা লিয়নের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করার পর পরই বিদ্রোহীরা গ্রেপ্তার করে হতভাগ্য নেতা স্টিভেন্সকে। অবশ্য বছর দুই পর পুনরায় ক্ষমতায় আসেন এই নেতা এবং ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সিয়েরা লিয়ন শাসন করেন।
কার্লোস ম্যানুয়েল পিয়েদ্রা (কিউবা)
শাসনকাল দুই-পাঁচ ঘণ্টা
ফিদেল কাস্ত্রোর বাহিনী যখন শনৈঃ শনৈঃ এগিয়ে আসছে, তখন কিউবার প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এমনকি ভাইস-প্রেসিডেন্টও দেশ থেকে পালিয়ে যান। ফলে সেনাবাহিনী বাধ্য হয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পিয়েদ্রাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাস্ত্রো রাজধানী হাভানা দখল করে নিলে সমাপ্তি ঘটে পিয়েদ্রার শাসনের।
জোসেফ গোয়্যেবলস (জার্মানি)
শাসনকাল পাঁচ ঘণ্টা
নাৎসি জার্মানির প্রপাগান্ডা মন্ত্রী হিসেবে গোয়্যেবলস পরিচিত বিশ্বজুড়ে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, হিটলার আত্মহত্যার পূর্বমুহূর্তে গোয়্যেবলসকে জার্মানির চ্যান্সেলর পদে নিযুক্ত করে যান। সেই শাসনকাল স্থায়ী হয়েছিল মাত্র পাঁচ ঘণ্টা।
হিটলারের গোঁড়া ভক্ত গোয়্যেবলস ও তাঁর স্ত্রী নিজেরা আত্মহত্যা করেন, সঙ্গে নিজেদের ছয় নিষ্পাপ সন্তানকেও বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেন। বলা যায়, নাৎসি জার্মানির অমানবিক সব যুদ্ধাপরাধের দায় নিয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তাঁরা।
রজার লাফঁতাত (হাইতি)
শাসনকাল প্রায় ২৪ ঘণ্টা
১৯৯১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করেছিলেন রজার। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এক পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান তিনি।
দিওসদাদো কাবেলো (ভেনেজুয়েলা)
শাসনকাল একদিন
২০০২ সালে পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত এক সেনা অভ্যুত্থানে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজকে জেলে পোরা হয়। শাভেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট দিওসদাদো কাবেলো এ সময় ক্ষমতা দখল করেন।
পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে, যখন একদিনের মধ্যেই শাভেজের অনুগত সৈন্যরা অভ্যুত্থানকারীদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়। ফলে পুনরায় ক্ষমতায় আসেন শাভেজ। কাবেলো পরে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।