গোপাল ভাঁড়ের গল্প
অনামুখো কে?
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র অনামুখোদের একদম পছন্দ করতেন না। একদিন রাতে গোপালের পক্ষে বাড়ি ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, গানের জলসা শুনতে শুনতে অনেক রাত হয়েছিল। তাই সেদিন বাধ্য হয়ে তাকে রাজবাড়ির অতিথিশালায় থাকতে হয়েছিল।
পরদিন ভোরে মহারাজ ঘুম থেকে উঠে অতিথিশালার বারান্দায় গোপালকে প্রথম দেখলেন, গোপালও মহারাজকে দেখে তাঁকে নমস্কার করল।
কিন্তু সেদিন নাপিতের কাছে নখ কাটতে যেতেই রাজার কড়ে আঙুলের খানিকটা মাংস কেটে গেল।
নাপিত বলল, হুজুর, এত বছর ধরে আপনার নখ-দাড়ি ও চুল কাটছি। কই, একদিনও তো একটু আঁচড় লাগেনি, আজ নিশ্চয় আপনি কোনো অনামুখোর মুখ দেখেছেন।
রাজা মনে করে দেখলেন, তিনি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই গোপালের মুখ দেখেছিলেন। রাজরাজার খেয়ালই আলাদা।
তিনি তক্ষুনি রক্ষী পাঠিয়ে গোপালকে তলব করে আনিয়ে বললেন, তোমার মতো অনামুখো বেঁচে থাকলে বহু লোকের সর্বনাশ ঘটবে, তাই আমি তোমার মৃত্যুদণ্ড দিলাম। আজ ভোরে উঠে তোমার মুখ দেখেছিলাম বলেই আমার কড়ে আঙুল কেটে গেছে।
গোপাল মৃত্যুদণ্ডের আদেশ শুনে কিছুমাত্র বিচলিত না হয়ে বলল, হুজুর, অনামুখোদের চরম দণ্ড দিয়ে ভালোই করেছেন। কিন্তু মহারাজ, ঘুম থেকে সবার আগে আপনি আমার মুখ দেখেছেন বলে আপনার কড়ে আঙুলের সামান্য একটু মাংস কেটে গেছে। আর ঘুম থেকে উঠে সবার আগে আমি আপনার মুখ দেখে উঠেছি বলে আজ আমার মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে। আপনি এবার বিচার করে বলুন, আমাদের দুজনের মধ্যে কে বেশি অনামুখো।
সঙ্গে সঙ্গে মহারাজ গোপালের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে দিয়ে বললেন, আমি মোটেই অনামুখো নই। দেখলে তো, তোমার কিছুই হলো না।
(সংগৃহীত)