ব্রেকআপ আজকাল!
জনম জনমের প্রেম আর আমৃত্যু একে অপরের হয়ে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ঘটনা আজকাল বিরলই বটে। তবে আজকাল যে কথা প্রায়ই শোনা যায় সেটি হলো ‘ব্রেকআপ’ মানে সম্পর্ক শেষ! লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট, শাহজাহান-মমতাজ, দেবদাস-পার্বতীর মতো প্রেমকাহিনী এখন কাহিনীই কেবল! ফেসবুকের যুগে এখন সম্পর্ক গড়তে আর ভাঙতে চোখের পলকের বেশি সময় লাগে না। হরহামেশাই ঘটছে বিচ্ছেদের ঘটনা। এই বাড়ন্ত ‘ব্রেকআপ’ ঘটনার আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
ভালোবাসার সম্পর্কে হুট করেই ব্রেকআপ মানতে পারে না অনেকেই। আর সত্যি বলতে, অনেক সময়ই এই ভাঙনের কারণগুলো হয় খুবই তুচ্ছ। তাই মোবাইল ফোনে পাঠানো বার্তাটাও হয় তুচ্ছ, একেবারে এক কথায় প্রকাশ- ‘আয়্যাম ব্রেকিং আপ উইথ ইউ’! ব্যস, চুকে গেল! তারপর কোনো কারণ ব্যাখ্যা না করেই শুরু হয় এড়িয়ে চলা। ওপাশ থেকে আরেকজনও কদিন পর হাঁপিয়ে ওঠেন- ‘ধূর, আর কত!’
কোনো তুচ্ছ কারণে যখন কেউ সম্পর্ক ভাঙে, বুঝতে হবে সম্পর্কের প্রতি তার শ্রদ্ধা বা টান- কোনোটাই বিশেষ ছিল না। সুতরাং, তাকে নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাবারও কোনো দরকার আর অবশিষ্ট নেই।
কিন্তু এই বিষয়টা অনেকেই বুঝতে পারেন না, বা বুঝলেও মেনে নেওয়াটা অসম্ভব হয়ে ওঠে কারো কারো জন্য। অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক ভাঙনের ধাক্কা সামলে ওঠা অনেক বেশি কষ্টের। আপনার ভালোবাসার মানুষটি সম্পর্ক থেকে সরে আসতে চাইলে কিভাবে বুঝবেন তা? একটু নজর দিলেই ভাঙনের লক্ষণ টের পাওয়া যায় বটে! সামান্য কথার ভঙ্গিতেও লুকিয়ে থাকে গভীর কিছু। যেমন-
উক্তি-১
‘তোমার নয়, সমস্যা আমারই আছে’- যখন কেউ এ কথা বলছে, বুঝে নিতে হবে যে তার মনে আছে অন্য কিছু। সে আসলে মনে করে সে আপনার চাইতে ‘ভিন্ন’ বা ‘ভালো’ কাউকে পেতে পারে!
কেন এমন বলা
ক্যালিফোর্নিয়ার বিবাহ ও সম্পর্ক বিষয়ক পরামর্শদাতা স্কট মিলেন্স মনে করেন, কেউ কেউ ভালো কিছুর আশায় ব্রেকআপ করতে চায়। এই ভাঙনের ধাক্কাকে সে একটু ‘ইতিবাচক’ হিসেবে উপস্থাপন করে আসলে সম্পর্ক থেকে কেটে পড়তে চায়। ভাবটা দেখানো হয় এমন যে- ‘আমাদের জন্য সম্পর্কটা ঠিকমতো যাচ্ছে না, কিন্তু তুমি অনেক ভালো, তুমি আমার থেকে ভালো কাউকে খুঁজে পাবে!’ আসল কথা হলো, সে তার কাছ থেকে সরে আসতে চাচ্ছে; ব্যস!
তাহলে কী করব
“ইট'স এ ব্রেকআপ নট এ ব্রেকডাউন” বইয়ের লেখক লিসা স্টিডম্যান মনে করেন, যদি কেউ এ ধরনের কথা কারও কাছ থেকে শুনে থাকে- তাহলে সে সত্যিই ভালো কিছুর যোগ্য। তিনি বলেন, “তোমার সঙ্গী তোমার সাথে আর সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে না এবং তুমি খুব কষ্ট পাবে এজন্য তোমার মুখের উপর সরাসরি একথা বলার সে সাহস পায়নি। এটাকে অনেকে সহানুভূতির সাথে মেলাতে পারে। কিন্তু আমি বলব এসব ভুলে গিয়ে নিজেকে ভালোবাসুন এবং সামনে এগিয়ে যান।”
উক্তি-২
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু মাঝেমাঝে ভালোবাসায় সব হয় না’- এর মানে এক্কেবারে সোজা। সম্পর্কের প্রতিশ্রুতির চেয়ে তার কাছে উল্লাস আর শরীরী আবেগটা বেশি দরকারি!
কেন এমন বলা
নতুন নতুন সম্পর্কের উল্লাস আর উত্তেজনাটা কিছুদিন বাদে স্বাভাবিকভাবেই থিতিয়ে পড়ে। কিন্তু ‘অতি আবেগী’রা ব্যাপারটা একদম মেনে নিতে পারে না। মিলেন্স মনে করেন, প্রকৃত ভালোবাসা শক্তপোক্ত আর পরিপূর্ণ হয় সময়ের সাথে সাথে; আবেগের জোয়ারে নয়! সুতরাং, সাধু সাবধান!
তাহলে কী করব
লিসা স্টেডম্যান তো এই অতি আবেগীদের একেবারে ভীরু ঠাওরান। সম্পর্কে গভীরতা আর সাম্য সৃষ্টি করার সাধ্যই তাদের নেই বলে ধারণা তার। সুতরাং এমন অসম প্রেমের ইতি টেনে ফেলাই বরং ভালো বলে মনে করেন তিনি।
উক্তি-৩
‘আমি কোনো সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত নই’- এর মানে ‘আমি তোমার সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াতে প্রস্তুত নই।’
কেন এমন বলা
সম্পর্কবিষয়ক পরামর্শদাতা এল জোয়ান অ্যালেন তাঁর এক আর্টিকেলে লিখেছেন- ত্বরিৎগতিতে শরীরী বা মানসিক আবেগের জোয়ারে যেসব সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এ ধরনের সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই আতঙ্কে ভোগেন। সে কারণেই হয়তো এভাবে বলা!
তাহলে কী করব
মানুষের একে অন্যের পরিচয়েই আসলে প্রেমে পড়ে আর সেখান থেকেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে মিলেন্স মনে করেন। সুতরাং, ‘প্রস্তুতি’ সহকারে প্রেমের ময়দানে নামার জবানকে বিশেষ সমীহ না করাই ভালো বলে ধারণা তার! তবে তা হলেও, একটু বুঝেশুনে আর সময় নিয়ে এগোলে সম্পর্কটাকে গলার ফাঁস মনে হবে না।
উক্তি-৪
‘আমাদের হয় তো অন্য কাউকে দরকার’- এর মানে- আমি তোমার থেকে আরো ভালো কাউকে চাই (আর এ নিয়ে আমার কোনো অনুতাপও নেই!)
কেন এমন বলা
এ ধরনের কথার মানে হলো সে মনে মনে আশাবাদী যে আপনি অন্য কারো খোঁজে নেই এখনো! সুতরাং, আপনার চেয়ে ‘ভালো’ কাউকে না পেলে সে আপনার কাছে ফিরে আসবার রাস্তাটাও খোলা রাখতে চায়- এমনই মতামত মিলেন্সের।
তাহলে কী করব
এ বিষয়ে স্টিডম্যানের সাফসাফ কথা- নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। বুঝে নিতে হবে যে আপনার নিজের কোনো কিছুর কমতি নেই। আপনার সঙ্গীর তা দেখবার যোগ্যতা নেই দেখেই অন্যের মাঝে কিছু খুঁজে পাওয়ার তালে রয়েছে। কাজেই তাদের বরং তাই করতে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন স্টিডম্যান।
উক্তি-৫
‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’- এর মানে হচ্ছে আপনার সঙ্গীটি আপনার সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না, আর অন্য কাউকে খুঁজে পাওয়ার জন্য একটু সুযোগ খুঁজছেন।
কেন এমন বলা
এমন কথা বলার মানে হলো, মন্তব্যকারী এই মুহূর্তে সম্পর্কের ইতি টানতে চাচ্ছেন। এই সম্পর্কে সময় বা আগ্রহ, কোনো কিছু দেওয়ারই কোনো রকম ইচ্ছা তাঁর আর নেই।
তাহলে কী করব
মিলেন্স মনে করেন, যখন কেউ কাউকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে তখন তাদের সব সময়ের আকাঙ্ক্ষাই হয় পাশাপাশি থাকা। স্টিডম্যানের এ ক্ষেত্রে কথা একই, স্বার্থপর মানুষ যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু নিজের কথাই ভাবে। সে আপনার যোগ্যই নয়। আপনার এমন কাউকে বেছে নেওয়া উচিত যে আপনাকে সত্যি পছন্দ করে এবং আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধা আছে।
সব শেষে মিলেন্স ব্রেকআপের বিষয়ে টেনেছেন একটি দর্শন- ‘আসলে দিনশেষে ব্রেকআপের কারণ হলো সম্পর্কটা শেষ করতে চাওয়া, আর কিছু নয়। বিষয়টা অনেকটা এ রকম যে- আমরা একসাথে অনেকটা সময় কাটিয়েছি এবং ভালো কিছু ক্ষণ ভাগাভাগি করেছি। কিন্তু আমি এই সম্পর্কটা নিয়ে আর এগোতে চাই না এবং অন্য কাউকে বেছে নিতে চাই।’ সুতরাং, ব্রেকআপ করার জন্য কেউ এমন কারণ দেখিয়ে গেলে তার সাথে আর না থাকাই আপনার জন্য ভালো। এর চেয়ে বরং নিজের জীবনে নতুন কিছু আসতে দিন, উপভোগ করুন প্রতিটি দিন!