‘ইউক্রেনে আক্রমণ চালালে কঠিন পরিণতি’
ইউক্রেনে আক্রমণ চালালে রাশিয়াকে ‘কঠিন অর্থনৈতিক পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, চলতি সপ্তাহান্তে যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে ‘জি-সেভেন’-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার বিরোধিতার ব্যাপারে ঐকমত্য জানানো হবে। এবং ওই বৈঠক থেকে স্পষ্ট জানানো হবে যে, রাশিয়ার এ ধরনের পদক্ষেপ ‘কৌশলগত ভুল’ হবে।
লিজ ট্রাস বলেন, যুক্তরাজ্য এবং এর মিত্রদের ‘রাশিয়াকে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।’
রাশিয়া ইউক্রেনের সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করায় উত্তেজনা বাড়ছে। যদিও রাশিয়া কোনো ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্রদের দেওয়া পূর্বসতর্কতা পুনর্ব্যক্ত করে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাস বলেছেন, ইউক্রেন প্রসঙ্গে এ ধরনের কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জি-সেভেন অত্যন্ত শক্ত অবস্থান নিতে যাচ্ছে।
লিজ ট্রাস আরও বলেন, ‘রাশিয়া যদি (ইউক্রেনে আক্রমণের) পদক্ষেপ নেয়, তা হবে কৌশলগত ভুল। এবং রাশিয়াকে এর জন্য কঠিন পরিণতি ভুগতে হবে।’
‘এবং আমরা এ সপ্তাহান্তে সমমনা মিত্রদের সঙ্গে আমাদের বার্তা প্রকাশে কাজ করছি’, যোগ করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সীমান্ত রয়েছে। তবে, সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের গভীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ এনেছে রাশিয়া। একই সঙ্গে তারা পূর্ব দিকে ন্যাটো জোটের অবস্থানের সম্প্রসারণ এবং রুশ সীমান্তের কাছে অস্ত্র মোতায়েন বন্ধে গ্যারান্টি চেয়েছে।
জি-সেভেন বৈঠকের আগে লিজ ট্রাস ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার সঙ্গে লন্ডনে আলোচনা করেছেন।
রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের সঙ্গে ‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সক্ষমতা’ নিয়ে কাজ করছে।
লিজ ট্রাস বলেন, ‘আমরা তাদের (ইউক্রেন) সহায়তা দিচ্ছি। এ ছাড়া আমরা তাদের জ্বালানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ব্যাপারেও সাহায্য করছি। তাই, (এখন) তারা কেবল রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল নয়। এবং এটিই ইউক্রেনকে সহায়তা করার উপায়।’
লিজ ট্রাস বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোকে যেন রাশিয়ার জ্বালানির ওপর কম নির্ভর করতে হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে যুক্তরাজ্য ও ইইউ।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালালে জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে ‘নর্ড স্ট্রিম টু’ গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে ‘সমস্যা’ তৈরি হবে। এ বিষয়ে জি-সেভেন বৈঠকে জার্মানির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান লিজ ট্রাস।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার গ্যাস ও জ্বালানির ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। এবং এ পদক্ষেপ বাজার বহির্ভূত অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করার, এবং ক্ষতিকর পক্ষগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর সামগ্রিক কৌশলের অংশ হওয়া উচিত। মুক্ত বিশ্ব যেন টিকে থাকা ও উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলগত স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হয়, তা নিশ্চিত করতে এ পদক্ষেপ নিতে হবে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত মঙ্গলবারের ওই বৈঠকের পর বাইডেন জানান, তিনি পুতিনকে স্পষ্ট করে বলেছেন—পুতিন যদি ইউক্রেনে আক্রমণ চালান, তাহলে তাঁকে ‘অর্থনৈতিক পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে, যা তিনি আগে কখনও দেখেননি।’