‘কুমারীত্ব ফেরানোর’ অস্ত্রোপচার নিষিদ্ধে আইন করছে যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যে ‘হাইমেনোপ্লাস্টি’ বা কথিত ‘কুমারীত্ব পুনরুদ্ধারের’ অস্ত্রোপচার অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
সম্প্রতি একটি চিকিৎসা বিলে ‘কুমারীত্ব ফেরানো’ সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের চিকিৎসাকে বেআইনি বলে সংশোধনী আনা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের বক্তব্য—কুমারীত্ব ফিরে পাওয়ার চিকিৎসাকে যদি বৈধতা দেওয়া হয়, তাহলে পরোক্ষভাবে কুমারীত্ব রক্ষা করার দাবিকে মেনে নেওয়া হচ্ছে।
ক্যাথলিক প্রভাবাধীন যুক্তরাজ্যে এক শ্রেণির মানুষ এখনও বিয়ে হওয়া পর্যন্ত মেয়েদের কৌমার্য্য বজায় রাখার ধারণায় বিশ্বাসী। যদিও আধুনিকপন্থিদের দাবি—কুমারীত্ব রক্ষা করার ধারণাটি অবমাননাকর।
নারীবাদীদের দাবি—‘কুমারীত্ব’ ধারণাটি তৈরিই করা হয়েছে মেয়েদের দমিয়ে রাখার সামাজিক অস্ত্র হিসেবে। এমন ধারণার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বহু নারীকে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়।
বিভিন্ন দেশের সমাজে মনে করা হয়—একজন নারীকে বিয়ের আগপর্যন্ত তাঁর কৌমার্য্য রক্ষা করতে হবে। বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে প্রথম শারীরিক সম্পর্কে স্ত্রীর যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হওয়াকে এ ক্ষেত্রে কুমারীত্বের প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়।
ইরানের এক শিয়া ধর্মগুরু ফতোয়া জারি করে মেয়েদের কুমারীত্ব ফিরে পাওয়ার চিকিৎসাকে বৈধ ঘোষণা করেছিলেন ২০০৭ সালে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, পশ্চিম ইউরোপসহ পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ‘হাইমেনোপ্লাস্টি’ অস্ত্রোপচার চালু রয়েছে। ভারতেও এ সংক্রান্ত চিকিৎসা করা হয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার। এ ধরনের চিকিৎসাকে প্লাস্টিক সার্জারি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। এতে খরচও প্রচুর। তবে, এ চিকিৎসার চাহিদা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে নারীদের বিতর্কিত ‘কুমারীত্ব পরীক্ষা’ এবং ‘কুমারীত্ব পুনরুদ্ধার’-এর অস্ত্রোপচার করা হয় বলে ২০২০ সালের নভেম্বেরে বিবিসির এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছিল।
বিবিসির অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে বেশ কিছু বেসরকারি ক্লিনিক এ ব্যবসায় জড়িত। এসব ক্লিনিক ‘কুমারীত্ব পুনরুদ্ধার’ করার বিজ্ঞাপন দেয়। এবং তথাকথিত কুমারীত্ব পরীক্ষা করার জন্য এসব ক্লিনিকে খরচ পড়ে ১৫০ থেকে ৩০০ পাউন্ডের মধ্যে। এসব চিকিৎসা কেন্দ্র জানায়—তারা ছিঁড়ে যাওয়া হাইমেন বা সতীচ্ছদ ঠিক করে দেওয়ার জন্য অস্ত্রোপচার করে থাকে। যার জন্য খরচ পড়ে দেড় হাজার থেকে তিন হাজার পাউন্ডের মধ্যে।
সমালোচকেরা বলছেন—এ ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি অবৈজ্ঞানিক এবং কোনো মেয়ে কুমারী কি না, এ পরীক্ষা তা নিশ্চিত করতে পারে না। এ পরীক্ষা নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা হতে পারে।
কুমারীত্ব পরীক্ষায় যোনিপথ পরীক্ষা করে দেখা হয় নারীর হাইমেন বা সতীচ্ছদ অক্ষত রয়েছে কি না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে—বিশ্বে অন্তত ২০ দেশে মেয়েদের কুমারীত্ব পরীক্ষার চল রয়েছে। ডব্লিউএইচও বলছে—কোনো মেয়ে যৌন সম্পর্ক করেছে কি না, তা এ পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এর কারণ—হাইমেন নামের এ সূক্ষ্ম ঝিল্লির মতো পর্দা নানা কারণে ছিঁড়ে যেতে পারে।