কুড়িয়ে পাওয়া প্রায় দুই লাখ টাকা ফেরত দিলেন দিনমজুর, নিলেন না উপহার
বরিশালে এক মিল-মালিক তাঁর হারিয়ে যাওয়া প্রায় দুই লাখ টাকা ফিরে পেয়েছেন। কুড়িয়ে পাওয়া ওই টাকা যিনি ফেরত দিয়েছেন, তিনি একজন দিনমজুর। কিন্তু, টাকা ফিরিয়ে দিয়ে কোনো উপহার নেওয়া তো দূরের কথা, নিজের পরিচয় পর্যন্ত প্রকাশ করেননি তিনি।
মঙ্গলবার রাতে টাকা ফিরে পেয়েছেন নগরীর বিসিক এলাকার সুগন্ধা ফ্লাওয়ার মিলের মালিক শংকর কুমার সাহা। তিনি জানান, গত ৬ আগস্ট বিসিক এলাকার ফ্রেশ বেকারি থেকে তাঁকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ওই টাকা একটি শপিং ব্যাগে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঝুলিয়ে নগরীর হাটখোলা কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন।
শংকর কুমার সাহা জানান, বিসিক এলাকার রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এতে শপিং ব্যাগ ছিঁড়ে টাকা পড়ে যায়। হাটখোলা গিয়ে দেখতে পান টাকাভর্তি ব্যাগ নেই। টাকার সন্ধানে নেমে পড়েন তিনি। পথে যে কয়টি দোকানে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, সব ক্যামেরার ফুটেজ দেখেও কোনো সন্ধান পাননি। গত ৮ আগস্ট দিনভর মাইকিং করান। টাকা ফিরিয়ে দিলে পুরস্কার দেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
শংকর সাহা বলেন, ‘টাকা ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। হঠাৎ বেলা ১১টার দিকে নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মর্তুজা আবেদীন ফোন করে বলেন, তাঁর টাকা হারানো গেছে কি না। টাকার পরিমাণ কত জানতে চেয়ে নিশ্চিত হয়ে বিকেলে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে টাকা আনতে যেতে বলেন।’
শংকর সাহা আরও বলেন, রাস্তায় টাকা কুড়িয়ে পাওয়া ব্যক্তি গরিব লোক। তাঁর পরিচয় জানাতে নিষেধ করেছেন। তাই, কাউন্সিলর তাঁর পরিচয় জানায়নি। এমনকি তাঁকে দেখেননি বলে জানান শংকর সাহা।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মর্তুজা আবেদীন বলেন, টাকা কুড়িয়ে পাওয়া ব্যক্তি একজন দিনমজুর। টাকা কুড়িয়ে পেয়েও তাঁর কোনো লোভ নেই। টাকা পেয়ে বাসায় নিয়ে যাযন। পরে টাকার মালিকের সন্ধান করতে থাকেন। মাইকিং শুনে স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে তাঁর কাছে জমা দিয়েছেন বলেন জানান তিনি।
মর্তুজা বলেন, ‘লোকটি কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁর পরিচয় কারও কাছে জানাতে নিষেধ করেছেন। তাই, কাউকে পরিচয় জানানো হয়নি। কিন্তু, এখনও ভালো মানুষ সমাজে আছে।’
‘একজন দিনমজুরের যে এক লাখ ৯০ হাজার টাকার প্রতি লোভ নেই, তা মানুষ জানুক’, বলেন কাউন্সিল।