‘টোকেন’ না থাকায় অটোরিকশা পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ
‘নিয়মিত চাঁদা না দেওয়ায়’ রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কের আগরবাগান এলাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা পুড়িয়ে দিয়েছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা—এমন অভিযোগ করেছেন রাঙামাটি অটোরিকশাচালক সমিতির নেতারা। একই কারণে কদিন আগে, ছয়টি অটোরিকশা ও চালকদের অপহরণ করার পর সেনা অভিযানে তাদের মুক্ত করার বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তারা। এই কারণে রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য অটোরিকশা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সমিতি।
অটোরিকশাচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু বলেন, ‘গত বেশ কিছুদিন ধরেই পাহাড়ি একটি সশস্ত্র সংগঠন রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কে চলাচলকারি সব অটোরিকশার কাছে বাড়তি চাঁদা দাবি ও টোকেন রাখার নির্দেশ দিয়ে জোরজবরদস্তি করে আসছে। কিন্তু, সড়কটিতে যান চলাচল খুব বেশি না হওয়ায় চালকদের দিনের রোজগার দিয়ে সংসার চালানোই দায়। তাই তাদের নির্দেশনা মানা সম্ভব হচ্ছে না। এই কারণে কয়েকদিন আগে সশস্ত্র সংগঠনটি আমাদের ছয়জন চালককে গাড়িসহ অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে সেনা অভিযানের মুখে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।’
মিজানুর রহমান বাবু আরও বলেন, ‘আজ শুক্রবার দুপুরে কয়েকজন সশস্ত্র পাহাড়ি যুবক আমাদের কামাল হোসেন নামের এক চালককে আটক করে মারধর করে এবং অটোরিকশাটি পুড়িয়ে দিয়ে চলে যায়। চালক তার কাছে থাকা এক হাজার টাকা দিতে চাইলেও নেয়নি তারা। এর প্রতিবাদে আমরা এই সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি এবং সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
পাহাড়ের কোন আঞ্চলিক দলকে দায়ী মনে করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বাবু বলছেন, ‘আমরা এখনই নাম বলতে চাইছি না। প্রশাসনিক পদক্ষেপ দেখে এবং সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত বলব।’
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মিজানুর রহমান বাবু রাঙামাটির প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ‘এর সঠিক বিচার না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
যে চালকের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার নাম কামাল হোসেন। তিনি শহরের মসজিদ কলোনি এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে।
পুড়িয়ে দেওয়া অটোরিকশার চালক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি দুজন যাত্রী নিয়ে রাঙামাটি থেকে কাপ্তাই যাচ্ছিলাম। কাপ্তাইয়ের কাছাকাছি আগরবাগান এলাকায় চার থেকে পাঁচজনের পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমার গাড়ি থামিয়ে মাসিক টোকেন আছে কি-না জিজ্ঞেস করে। তারা মাসিক চাঁদার টোকেন না পেয়ে আমাকে গুলি করতে চাইলে আমি না মারার জন্য কাকুতি মিনতি করি। তাদের এক হাজার টাকা দিতে চাইলেও তারা তা না শুনে আমাকে মারধর করে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।’
‘খবর পেয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে গাড়িটি পুড়ে গেছে’ বলে জানিয়েছেন কাপ্তাই ফায়ার স্টেশনের অফিসার শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন পৌঁছাই ততক্ষণে গাড়িটি পুরো বডি পুড়ে গেছে। ইঞ্জিনটি হয়তো সক্রিয় থাকতেও পারে।’
এই বিষয়ে রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। পুলিশ সেখানে গেছে। সবার সঙ্গে কথা বলে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’