মুন্সীগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
বিএনপির বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জ শহরের মুক্তারপুর পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে।
এ সময় ১০ পুলিশ ও তিন সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক বিএনপির নেতাকর্মী আহত হন। আটটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আটজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ-উল-ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান, পরিদর্শক (অপারেশন) মোজাম্মেল হক, উপপরিদর্শক (এসআই) কাজল দাস, এসআই মাঈনউদ্দিন, এসআই সুকান্ত বাউল, এসআই আমিনুল হাসান, এসআই অজিত, এসআই ইলিয়াস, কনস্টেবল রায়হান, দৈনিক সমকালের জেলা প্রতিনিধি কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু, দৈনিক দিনকালের জেলা প্রতিনিধি গোলজার হোসেন, সাংবাদিক রুবেল। আহতদের মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদিকে আহত বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ একজনের অবস্থা আশঙ্কজনক।
কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ও নেতাকর্মীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সদর উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম পৌর বিএনপি শহরের মুক্তারপুর এলাকার পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। দুপুর আড়াইটা থেকে মুক্তারপুর এলাকার আশপাশে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে। পুলিশও অবস্থান নেয় আগে থেকেই। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় আসতে শুরু করে। এ সময় পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বিএনপির নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে চারদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে তারা। এ সময় পুলিশ গুলি চালায় এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। মুহূর্তেই মুক্তারপুর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ ও সাংবাদিকদের আটটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয় বেশ কয়েকজনকে।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে দুজন পুলিশ সদস্য ধলেশ্বরী নদীতে ঝাঁপ দিলে বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানেও তাদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থলে পুলিশের বসানো সিসি ক্যামেরাও ভেঙে ফেলে তারা।
সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সদর উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় জড়ো হচ্ছিল। এ সময় দুদিক থেকে পৃথক দুটি মিছিল আসছিল। হঠাৎ পুলিশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। মিছিলের ব্যানার কেড়ে নেয় এবং লাঠিচার্জ করে। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়। পুলিশ টিয়ারশেল ও গুলি চালায়। আমাদের ৭০ থেকে ৮০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব বলেন, কোনো রকমের সভা সমাবেশের অনুমতি ছিল না। অনুমতি ছাড়া তারা রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচলে বাধা দিচ্ছিল। দুই গ্রুপ (রতন-আব্দুল হাই) নিজেরা নিজেরা মারামারি করছিল। এর কারণেই পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য গেছে। এ সময় তারা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা করেছে। পুলিশ তখন আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
সুমন দেব আরও বলেন, যারা অনুমতি ছাড়া এ সমাবেশ করে বিশৃঙ্খলা করেছে তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃদুল দাস জানান, শাওন নামের একজনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তার মাথায় আঘাত রয়েছে।