১৫ ছাগল নিয়ে বিপাকে বরিশাল সিটি করপোরেশন
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বরিশালের মুসলিম কবরস্থানের অভ্যন্তরে চড়ানোর অভিযোগে আটক করা ১৫ ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে ছাগলগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হলেও তা নেয়নি মালিক।
নগর ভবনের এমন দাবির বিপরীতে ছাগলগুলোর মালিক বলছেন, মুচলেকার কিছু শর্ত অযৌক্তিক হওয়ায় আমি তা পরিবর্তন করে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু সিটি করপোরেশন তা না মানায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ছাগলগুলো বরিশাল নগরীর আমানতগঞ্জে সিটি করপোরেশনের একটি গ্যারেজে রয়েছে। মালিক না নেওয়ায় এগুলোর লালন-পালন নিয়ে যথেষ্ট দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বরিশাল মুসলিম গোরস্থানে অনুপ্রবেশের দায়ে ওই ১৫টি ছাগল আটক করে নিয়ে যান বরিশাল সিটি করপোরেশনের সিকিউরিটি গার্ডরা।
এ ব্যাপারে গার্ডদের কমান্ডার রেজাউলকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘কবরস্থানে ঢোকার কারণে ছাগলগুলো আটক করে নিয়ে আসা হয়। কবরস্থানে গবাদি পশু চড়ানোর ব্যাপারে বহু আগে থেকেই সিটি করপোরেশনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’
এ ব্যাপারে ছাগলের মালিক শাহীনা আজমিন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছাগল ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে রাতে মোবাইলফোনে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু সময় অতিবাহিত হলেও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
নগর ভবনে শাহীনা আজমিনের দেওয়া এক লিখিত আবেদনে বলা হয়, ‘ধরে নিয়ে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের গ্যারেজে একটি ছাগল বাচ্চা প্রসব করেছে। আমানতগঞ্জ এলাকার ওই গ্যারেজের ঠাণ্ডা ফ্লোরে রাখা হয়েছে ছাগলগুলো, মশারি দেওয়া হয়নি এবং উন্নত জাতের এসব ছাগলকে উন্নতমানের খাবার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
শাহীনা আজমিন আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘বরিশাল নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম কবরস্থান রোডে আবেদনকারীর সাড়ে ৮ শতাংশ জমিতে শক্ত বেড়া দিয়ে ছাগলগুলো আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভুলবশত ছাগলগুলো মুসলিম কবরস্থানে ঢুকে পড়ে।’
ছাগলের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে আবেদনকারীর ভাই ও ছাগলের তত্ত্বাবধানকারী শাহরিয়ার সাচিব রাজীব বলেন, ‘আমাদের ২১টি ছাগলের মধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর ১৫টি ছাগল সিটি করপোরেশনের গার্ডরা ধরে নিয়ে যায় এবং বর্তমানে সেগুলো সিটি করপোরেশনের আমানতগঞ্জের গ্যারেজেই রয়েছে। আর সেখানে দুটি ছাগল বাচ্চাও দিয়েছে।’
এ বিষয়ে শাহরিয়ারের বড় বোন ষাটোর্ধ্ব শাহীনা আজমিন বলেন, ‘আমাদের ভুল আমরা স্বীকার করেছি। ছাগলগুলো নিয়ে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেছি। তবে এখনও ছাগলগুলো ফেরত পাইনি। এরইমধ্যে ১৫ ছাগলের মধ্যে দুটি ছাগল দুটি বাচ্চা দিয়েছে, ফলে ১৭টি ছাগল হয়েছে। এই বিষয়ে পুলিশ কমিশনারকে জানানো হলে তিনি উদ্যোগ নেন। আর সেই উদ্যোগের ফলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা জরিমানার পাঁচ হাজার টাকা এবং মুচলেকা দেওয়ার জন্য গত ১৪ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশনে যেতে বলেন। সেই অনুযায়ী সিটি করপোরেশনে গেলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হবে না জানিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলেন। তবে অঙ্গীকার নামার কিছু পয়েন্টের ওপর আমার আপত্তি থাকায় স্বাক্ষর দেওয়ার আগে তার একটি কপি চাই আমার আইনজীবীকে দেখানোর জন্য। তবে তা দিতে রাজি হননি প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এরপর থেকে বিষয়টি সেভাবেই পড়ে রয়েছে।’
প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, ছাগলগুলো মুচলেকা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ এখনও তা করেনি বলে জানা গেলেও এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন বলেন, ‘বিষয়টির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে আমার জানা নেই। বর্তমানে আমি ঢাকায় রয়েছি। বরিশালে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব।’