প্রতিশোধ নিতে শিশুছাত্রকে অপহরণ, সিরাজগঞ্জে নিয়ে খুন
দাদনের কিস্তি ও ঘরভাড়া পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় বাবা, বোন ও স্ত্রীকে অপমানের প্রতিশোধ নিতে মাদ্রাসার এক শিশুছাত্রকে অপহরণের পর গলা কেটে হত্যা করেছে বাড়ির ভাড়াটিয়া এক যুবক ও তার সহযোগীরা।
আজ রোববার (১২ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (অপরাধ) মাহবুব-উজ-জামান মহানগরীর গাছা থানায় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য সাংবাদিকদের জানান।
জিএমপির উপকমিশনার জানান, গাজীপুর থেকে অপহৃত ওই শিশুর মরদেহ সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার চৌদ্দরশি (খাস কাউলিয়া) এলাকায় যমুনা নদীর চরের শস্যক্ষেতের বালুর নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই যুবককে আটক করা হয়েছে।
জিএমপির উপকমিশনার বলেন, নিহত শিশুর নাম তামজীদ হোসেন (৯)। সে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানাধীন কুনিয়া পাছর এলাকার সোবহান সরকারের ছেলে এবং টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন সাতাইশ এলাকার মোকদ্দমাতুল হিফজ মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের আবাসিক ছাত্র ছিল। গ্রেপ্তার করা যুবকের নাম সোহাগ হোসেন (২৫)। তিনি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার তেপাড়িয়া গ্রামের মাখনের ছেলে।
জিএমপির গাছা জোনের সহকারী কমিশনার মো. মাকসুদুর রহমান জানান, মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় মহানগরীর গাছা থানাধীন কুনিয়া পাছর এলাকার সোবহান সরকারের শিশু সন্তান তামজীদ বাড়িতে বেড়াতে আসে। গত শুক্রবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে বাড়ির সামনে থেকে তামজীদকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায় বাড়ির ভাড়াটিয়া সোহাগ। শিশু তামজীদ বাড়ি ফিরে না আসায় তার স্বজনরা সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজখুঁজি করেও সন্ধান পায়নি। এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার দুপুরে গাছা থানায় মামলা করেন শিশুটির বাবা। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে সোহাগকে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে তাঁর এক খালার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার চৌদ্দরশি (খাস কাউলিয়া) এলাকায় যমুনা নদীর চরের শস্যক্ষেতের বালুর নিচ থেকে ভিকটিম তামজিদের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তাঁর মা-বাবা ও স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জিএমপির গাছা জোনের সহকারী কমিশনার আরও জানান, সোবহান সরকারের বাড়িতে প্রায় সাত বছর ধরে ভাড়া থাকেন সোহাগের বোন ও মা-বাবা। দুই মাস আগে সোহাগ তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাড়ির ভাড়া বাসায় উঠেন। ওই বাড়িতে ভাড়া থেকে সোহাগ এলাকায় টাইলস্ মিস্ত্রির কাজ করতেন। সোবহান সরকারের স্ত্রী (ভিকটিমের মা) দাদন ব্যবসা করেন। ভাড়াটিয়া সোহাগ ভিকটিমের মায়ের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাদন (ঋণ) নেন এবং ঘরভাড়া বাকি ছিল। সোহাগের সহোদর বোন সুলতানাও ভিকটিমের মায়ের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা দাদন নেন। কয়েকদিন আগে সোহাগের স্ত্রী সুমাইয়া বাড়ির মালিকের ঘর থেকে কিছু জামা-কাপড় চুরি করে ধরা পড়েন। এদিকে দাদনের বকেয়া কিস্তি ও বাড়িভাড়া পরিশোধ না করায় সোহাগের স্ত্রী, বোন ও মা-বাবাকে বকাঝকা করেন তামজীদের মা। এ সময় তিনি সোহাগের স্ত্রীকে চুন্নি বউ বলে গালাগাল ও অপমান করেন। অপমানিত হয়ে তাঁরা কান্নাকাটি করে সোহাগের কাছে অভিযোগ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন সোহাগ। এর জেরে প্রতিশোধ নিতে শিশু তামজিদকে অপহরণ করে রাতে টাঙ্গাইলের নাগরপুর নিয়ে যান তিনি। পরে ওই রাতেই নৌকাযোগে যমুনা নদী পার হয়ে সিরাজগঞ্জের চৌহালির ওই চরে নিয়ে গলাটিপে তামজিদকে হত্যা করেন তিনি। এ সময় তামজীদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো চাকু দিয়ে শিশুটির গলা কাটেন ও শরীরে একাধিক আঘাত করেন। পরে শিশুটির পরনের জামা-কাপড় খুলে উলঙ্গ করে মরদে বালুর নিচে পুঁতে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পুনরায় টাঙ্গাইলে এসে তার খালার বাসায় আশ্রয় নেন। ঘটনার দিন তাঁর মা-বাবা গ্রামের বাড়ি ছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন গ্রেপ্তার করা সোহাগ।
সংবাদ সম্মেলনে জিএমপির সহকারী কমিশনার (অপরাধ) হাফিজুল ইসলাম এবং গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহিম হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।