প্রাণনাশের হুমকি ও ভরণ-পোষণ না দেওয়ার অভিযোগে ছেলের বিরুদ্ধে বাবার মামলা
ভরণ-পোষণ না দেওয়া ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে মো. ইয়াছিন (৪৪) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা হাফেজ আবুল মোজাফফর। চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারজানা ইয়াসমিনের আদালতে আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে এ মামলা দায়ের করেন।
হাফেজ আবুল মোজাফফর (৭৮) লোহাগাড়ার চরম্বা মাইজভিলা এলাকার মৃত মৌলভী লাল মিয়ার ছেলে। তিনি নগরের গণি বেকারি মোড় হযরত মোল্লা মিসকিন শাহ (রাহ.) মসজিদে দীর্ঘদিন ধরে মুয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত আছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে হাফেজ আবুল মোজাফফরের জমি ও ঘর দখলে নিয়ে বসবাস করছেন ছেলে মো. ইয়াছিন। সম্পত্তি তার নিজের নামে লিখে দেওয়ার জন্য বাবাকে চাপ দিয়েও না নিতে পেরে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
বাবার কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসার কথা বলে এবং পরিবারের বিভিন্ন প্রয়োজনে ৩ লাখ ৭ হাজার ৪৩৫ টাকা ধার নেয় ইয়াছিন। সেই টাকাও ফেরৎ দেয়নি। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকাকালে লোহাগাড়ার আধুনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে হেবা দলিলে স্বাক্ষর নিয়ে নেয় ইয়াছিন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রামের বাড়িতে ছেলে সব সম্পত্তি নিজের দাবি করে বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর ১৬ মার্চ পুনরায় বাড়িতে গিয়ে ধার নেওয়া টাকা ফেরৎ চাইলে উত্তেজিত হয়ে ছেলে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, প্রাণনাশের হুমকি ও ভরণ-পোষণ না দেওয়াসহ একাধিক অভিযোগে ছেলে মো. ইয়াছিনের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ বাবা হাফেজ আবুল মোজাফফর আদালতে মামলার আবেদন করেছেন। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি গ্রহণ করেন এবং লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করার জন্য পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন-২০১৩ প্রবর্তন করে। আইন অনুযায়ী, পিতা-মাতা বা দাদা-দাদি বা নানা-নানিকে ভরণ-পোষণ না দিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং জরিমানার টাকা না দিলে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। যে সন্তানের ওপর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বর্তায় সেই সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী বা ছেলে-মেয়ে অথবা কোনো নিকট আত্মীয় এই আইন অনুযায়ী ভরণ-পোষণ দিতে বাধা দিলে বা অসহযোগিতা করলে তাকেও একই শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে।