অস্ত্রসহ আন্তজেলা ডাকাতদলের ১৮ সদস্য গ্রেপ্তার
নওগাঁ জেলা পুলিশ দুটি পৃথক ডাকাতির ঘটনায় বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে আন্তজেলা ডাকাতদলের ১৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। সেই সাথে ডাকাতির মালামাল উদ্ধার করেছে। পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক তাঁর সম্মেলন কক্ষে আজ শুক্রবার (৩১ মার্চ) দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ২২ মার্চ রাতে গাইবান্ধা থেকে ৪০০ বস্তা আতপ চাল নিয়ে একটি ট্রাক চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে রাত দেড়টায় নওগাঁ শহরের বাইপাস সড়কের পাশে ইকরতারা নামকস্থানে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে আট ডাকাত চাল বোঝাই ট্রাকটি আটকায়। ট্রাকের চালক ও হেলপারের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে রেখে ট্রাকসহ ওই ট্রাকের ৪০০ বস্তা আতপ চাল লুট করে নিয়ে যায়। ভোরে লোকজনের সহায়তায় হাত-পায়ের বাঁধন খুলতে সক্ষম হন ট্রাকের চালক ও হেলপার। পরে তাঁরা বিষয়টি নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশকে জানায়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, তাঁর নির্দেশনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া হাবিব খান এবং সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান প্রয়োজনীয় ফোর্সসহ অভিযান শুরু করেন। এরই এক পর্যায় বগুড়ার শেরপুর থানার রানির হাট থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়। ২৮ মার্চ সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রথমে দুই ক্রেতাকে আটক করে। তাদের স্বীকারোক্তি মতে সোহাগ হোসেনের বাড়ি থেকে ৯০ বস্তা এবং বগুড়ার নিশিন্দারা হতে আরও ২০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। পরের দিন ২৯ মার্চ কাহালু থানা এলাকা থেকে শাজির উদ্দিন মণ্ডল ওরফে মিলনকে গ্রেপ্তার এবং তাঁর কাছ থেকে আরও ১১১ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই অন্যতম ডাকাত জিয়াকে কাহালু থানা এলাকা থেকে এবং ৩০ মার্চ রাতে জয়পুরহাট ও নওগাঁর বিভিন্ন এলাকা থেকে শাহজাহান ওরফে লালন, মেহেদী হাসান ও ইউসুফ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেপ্তার করা মেহেদী হাসান ও ইউসুফ আলী বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। অবশেষে আজ ৩১ মার্চ ভোররাতে বগুড়া সদরে অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলের মূল হোতা মাহফুজ আলম, রাজু পালোয়ান ও রতন ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার করা রাজু পালোয়ানকে নিয়ে সিরাজগঞ্জে অভিযান চালিয়ে চাল ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত শরীফ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে ১১১ বস্তা চাল বিক্রির দুই লাখ ১৬ হাজার ৪৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র, হাসুয়া, দা, প্লাস ও হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়। এই ডাকাতির ঘটনায় মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের মধ্যে জিয়ার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ সাতটি, আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ চারটি, মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ দুটি, রতনের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ দুটি এবং রাজু পালোয়ানের বিরুদ্ধে খুন-ডাকাতিসহ বিভিন্ন থানায় আটটি মামলা রয়েছে।
অপরদিকে, গত ২২ মার্চ রাত অনুমান ১০টা ২০ মনিটে জেলার পোরশা উপজেলার সরাইগাছি-অড্ডা সড়কে তাইতর মোড় নামকস্থানে কতিপয় দুষ্কৃতকারী একটি মোটরসাইকলে আটকিয়ে আরোহী মিলন হোসেনের কাছ থেকে একটি স্যামসং মোবাইল ফোন ও নগদ ১৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ওই সময় একটি মাইক্রোবাস আসে। দুষ্কৃতকারীরা মাইক্রোবাসের যাত্রী রাফিয়া জান্নাতের কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের গহনা, অপর যাত্রী আমেনা খাতুনের কাছ থেকে নগদ ১৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এ ঘটনায় মোছা. আমেনা খাতুনের ছেলে আমিনুল ইসলাম রাজু বাদী হয়ে পোরশা থানায় মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মো. বাচ্চু মৃধা, বদিউজ্জামান তোতা, হাফিজুর রহমান ওরফে হাফিজুল, মো. মোশারফ হোসেন, মো. সাদেকুল ইসলাম এবং মো. শাহিন আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) গাজিউর রহমান, নওগাঁ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া হাবিব খান এবং নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি ফয়সাল বিন আহসানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।