উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ার বিষয়ে যা বলল টিআইবি
উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় সরকারি নজরদারি আর ভিন্নমত দমনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি দেশের ভিতরে উপাত্ত মজুতের অবিবেচনাপ্রসূত বিধান অপপ্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করে টিআইবি।
আজ সোমবার (১৭ এপ্রিল) টিআইবি কার্যালয়ে ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩ (খসড়া) : টিআইবির পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে একথা বলা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান; উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের ও টিআইবির ডেটা প্রোটেকশন অফিসার ড. মো. তরিকুল ইসলাম, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।
সংবাদ সম্মেলনে ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’র খসড়ার ওপর টিআইবির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।
১৪ মার্চ ২০২৩ উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩-এর খসড়া অংশীজনের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। টিআইবি গত ২৮ মার্চ ৪১টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছে। এটি আলোচ্য বিষয়ে প্রকাশিত চতুর্থ খসড়া। এর আগের প্রতিটি খসড়ার ওপর টিআইবি বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ মতামত দিয়েছে এবং দুই দফা সংবাদ সম্মেলেনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের সামনেও তা তুলে ধরেছে। খসড়া প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা চলমান আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে টিআইবির বেশকিছু সুপারিশ মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে, কতোগুলো সুপারিশ মেনে নেওয়া হলো, তার চাইতেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোন সুপারিশগুলো পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
টিআইবি জানিয়েছে, এই ধরনের আইনের ক্ষেত্রে আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত নীতি হলো কেবল মাত্র একক ব্যক্তির (জীবিত ব্যক্তি) আওতায় আসবে। অথচ আলোচ্য খসড়াতে ‘ব্যক্তি’ অর্থে একক ব্যক্তির পাশাপাশি আইনগত ব্যক্তিসত্ত্বা, সংস্থা, অংশীদারি কারবার, কোম্পানি, সমিতি, করপোরেশন, সমবায় সমিতি, প্রতিষ্ঠান বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে উপাত্তধারী, নিয়ন্ত্রক, প্রক্রিয়াকারি এবং নজরদারির জন্য প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সবাই ‘ব্যক্তি’ হওয়ায়, ভিন্নভিন্ন প্রেক্ষিতে সুরক্ষা এজেন্সিসহ সবাই উপাত্তধারী, প্রক্রিয়াকারি ও নিয়ন্ত্রক হতে পারে। কার্যত ব্যক্তির সংজ্ঞার ব্যাপকতা আলোচ্য আইনটিকে একটি অবাস্তব অবস্থানে নিয়ে গেছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ইতোপূর্বে টিআইবি উপস্থাপিত কোনো কোনো সুপারিশ বিবেচনায় নিলেও খসড়া আইনের মৌলিক ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে সরকার নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছে, যা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে এই আইনের মূল লক্ষ্য ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার যে উদ্দেশ্য, তার পরিবর্তে এটিকে ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপক সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বৈশ্বিক চর্চা উপেক্ষা করে খসড়ায় এই আইনের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের পরিবর্তে লঙ্ঘনের সমূহ ঝুঁকি বর্তমান খসড়ায়ও রাখা হয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্যের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ও প্রাধান্য অনুযায়ী বিন্যাসের অনুপস্থিতি ও এর ফলে এই আইনের যথেচ্ছ ব্যবহারের সম্ভাবনা যার উদাহরণ। সরকারি কর্তৃত্বাধীন তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তা স্বার্থের দ্বন্দ্বে দুষ্ট ও বৈশ্বিক চর্চার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একইভাবে যে হারে এই আইনের অসংখ্য অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যার ক্ষমতা বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে সরকারের হাতে একচ্ছত্রভাবে অর্পণ করা হয়েছে, তার ফলে সরকার চাইলে ইচ্ছে মতো মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের উদ্দেশমূলক অপব্যবহার ও বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমত দমন এবং নজরদারির জন্য এই আইনকে ব্যবহার করতে পারবে। এ সকল উদ্বেগ নিরসনে টিআইবি উপস্থাপিত সুপারশমালা বিবেচনায় নিয়ে খসড়াটি ঢেলে সাজাবার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’