ছেলেদের বিরুদ্ধে বাবাকে হত্যার অভিযোগ
হবিগঞ্জ শহরে বৃদ্ধ বাবাকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে দুই ছেলের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম কিতাব আলী (৭০)। তিনি হবিগঞ্জ শহরের মাহমুদাবাদ এলাকায় থাকতেন।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জানান, অভিযোগের কারণে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
কিতাব আলীর প্রতিবেশীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জায়গা বিক্রির টাকা নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে মনোমালিন্যের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
নিহত কিতাব আলীর বোন পুতুল বেগম অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তিনি তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পান। কিন্তু কিতাব আলীর ছেলেমেয়েরা তাঁর ভাইবোনসহ অন্য আত্মীয়স্বজনকে কোনো খবর না দিয়ে তাড়াতাড়ি করে লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেয়। এরই মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে নিহতের ছোট ভাই বিলাত মিয়া, বোন জমিলা বেগম ও পুতুল বেগম তাদের ভাই কিতাব আলীর মৃত্যুর খবর পেয়ে রাত ১০টায় দিকে তাঁর বাসায় যান। এ সময় তাঁরা কিতাব আলীর গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। এতে তাঁদের সন্দেহ হয়, সন্তানরা কিতাব আলীকে হত্যা করেছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি তাঁরা হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে অবগত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য অনুরোধ জানান।
পরে রাত ১১টার দিকে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এ কে এম রাসেলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
কিতাব আলীর ছোট ভাই বিলাত মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নিহতের ছেলে জুনায়েদ মিয়া ওরফে জুয়েল ও আল-আমিন সম্পত্তির লোভে তার বাবাকে হত্যা করে আমাদের না জানিয়ে লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সংবাদ পেয়ে আমরা এ বিষয়টি পুলিশকে জানাই।’
এ বিষয়ে নিহতের বোন জমিলা বেগম অভিযোগ করেন, ‘কিতাব আলীর দুই ছেলে মাদকসেবী। মাদকের টাকা না দিলে তারা প্রায়ই কিতাব আলীকে মারধর করত। ইদানীং তারা ভাইকে দ্বিতীয় দফা জমি বিক্রি করে বহুতল বাসা নির্মাণের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝাগড়া-বিবাদ হতো। না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে।’
তবে হত্যার ঘটনা অস্বীকার করে কিতাব আলীর বড় ছেলে জুনায়েদ মিয়া জানান, তিনি সিলেটে তাবলিগ জামাতের চিল্লায় ছিলেন। সন্ধ্যার দিকে খবর পান, তার বাবা স্ট্রোক করে মারা গেছেন। এ খবর পেয়ে তিনি বাসায় ফেরেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা অ্যাজমায় আক্রান্ত ছিলেন। ইতোপূর্বে আরো একবার স্ট্রোক করেছিলেন।’
মৃত কিতাব আলীর গলায় আঘাতের চিহ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে ছেলে জুনায়েদ মিয়া জানান, দুপুরে তাঁদের বাসায় শায়েস্তানগর এলাকার চাল বিক্রেতা দরবেশ আলী চাল বিক্রির জন্য এসেছিল। এ সময় টাকা দেওয়া-নেওয়া নিয়ে দরবেশ আলীর সঙ্গে তাঁর বাবা কিতাব আলীর কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লে স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। পরে আমরা আমাদের আত্মীয়স্বজনকে সংবাদ দিয়ে লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিই। কিন্তু আমার বাবার মৃত্যুকে ভিন্ন খাতে নিতে বাবার সৎভাইরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কোনো ছেলে বাবাকে হত্যা করতে পারে না।’