আইজেএসও-তে দেশের তিনটি রৌপ্য ও তিনটি ব্রোঞ্জ পদক জয়
২০তম আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে (আইজেএসও-২০২৩) বাংলাদেশ দল তিনটি রৌপ্যপদক ও ৩টি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছে। ৫৪টি দেশের অংশগ্রহণে অনুর্ধ্ব-১৬ বয়সীদের আন্তর্জাতিক এই অলিম্পিয়াডটি গত ১-৯ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডর রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছয় সদস্যের বাংলাদেশ দল অংশ নিয়ে ছয়জনই পদক অর্জন করে। ৯ ডিসেম্বর ব্যাংককের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এক জমকালো অনুষ্ঠানে বিজয়ীদেরকে পদক তুলে দেয়া হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে রৌপ্যপদক অর্জন করেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিরাজুস সালেকিন সামীন, রাজশাহীর গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফায়েজ আহমদ এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মনামী জামান। ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছে নটরডেম কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শুভাশীষ হালদার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাসলিমা তাসনিম লামিয়া ও ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাবিল ইসলাম। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ৫৪টি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তারা এই পদক অর্জন করেছে।
থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ দলের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী জানান, “আমাদের ফলাফল অসাধারণ হয়েছে এই বছর। আমাদের পরীক্ষামূলক কাজে আরও অগ্রগতি প্রয়োজন। এই অর্জনে আমাদের ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের অভিনন্দন।’
বাংলাদেশ দলের পক্ষে রৌপ্যপদক জয়ী ফায়েজ আহমদ বলেন, “গত কয়েক মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে রৌপ্য পদক পেয়ে অব্যশই ভালো লাগছে। আশা ছিল আরো ভালো কিছু পাবার। তবে বাংলাদেশের পুরো দল পদক পাওয়ায় সে আক্ষেপ কেটে গেছে। আশা করি, যথেষ্ট প্রশিক্ষণ পেলে বাংলাদেশ সামনের বছরই স্বর্ণ পাবে।’
আরেক রৌপ্য পদকজয়ী মনামী জামান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড ২০২৩-এ রৌপ্যপদক অর্জন করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমরা আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের গত কয়েক মাসের পরিশ্রমের ফসল এটি। আশা করি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আরও ভালো ফলাফল করবে।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাসলিমা তাসনিম লামিয়া বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অংশগ্রহণ করে ব্রোঞ্জ মেডেল পাওয়াটা সত্যিই স্বপ্ন পূরণের মতো ছিল। দেড়-দুই মাস ট্রেইনিং আর তারপর এই দশ দিনের অভিজ্ঞতার শেষে মেডেলের সাথে ফিরতে পারার অনুভূতি অসাধারণ।’
বাংলাদেশ দল বাছাইয়ের আয়োজন জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এবারের আইজেএসও দলের সহকারী দলনেতা জালাল আহমেদ বলেন, ‘টিম বাংলাদেশে এ অর্জনে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। আশা করি, ভবিষ্যতে এই ভাল ফলাফলের ধারা অব্যাহত থাকবে। নেক্সট লক্ষ্য গোল্ড, ইনশাআল্লাহ। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি সবমসময় এ টিমের সাথে থাকবে, ইনশাআল্লাহ। টিমের সকল সদস্য যারাসামনে ও পেছনে থেকে নিরলস ও কঠোরভাবে পরিশ্রম করেছেন সকলকে অভিনন্দন।’
ব্যাংককে ছয় সদস্যের বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সহকারী দলনেতা হিসেবে আরও আছেন বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের একাডেমিক সদস্য আবিদুর রহমান।
প্রসঙ্গত, রোববার (১০ ডিসেম্বর)ঢাকা ফিরেছে বাংলাদেশ দল। ঢাকা বিমানবন্দরে দলকে স্বাগত জানাবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সদস্যরা। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দল নবম বারের মত অংশ নিয়েছে। ৫৪টি দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞানের লিখিত পরীক্ষা ও সবগুলো বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষার উপর প্রতিযোগিতা করে এই গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।
গত ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই অলিম্পিয়াডে শিক্ষার্থীরা এমসিকিউ, থিওরি ও ব্যবহারিক অংশের পরীক্ষা দেয়। এর আগে গত আট বছরে বাংলাদেশ দল আইজেএসও থেকে ১২ টি রৌপ্য ও ২১ টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছিল।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জন্য বাংলাদেশ দল যৌথভাবে নির্বাচন করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন। এ বছর আয়োজক হিসেবে আরও যুক্ত ছিল জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। আয়োজনের সহযোগী হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো ও ম্যাসল্যাব। ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে আছে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা।