‘মালয়েশিয়ার জেলে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো’
মালয়েশিয়ার জেলে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। এমন কথা জানালেন সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত বৈধ শ্রমিক মো. আজমত হোসেন। এনটিভি অনলাইনকে তিনি জানান, মালেয়শিয়ার জেলে অবৈধ শ্রমিকের সাথে বহু বৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক আটক রয়েছেন।
আজমত জানান, জেলে আটক আছে স্টুডেন্ট এবং ট্যুরিস্ট ভিসায় আসা বহু শ্রমিক। বেশির ভাগই দালালকে টাকা পাসপোর্ট দিয়ে তাঁরা এখন জেলে। একেবারে কাগজপত্রবিহীন শ্রমিকরা দেশটির আইনানুসারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুটি করে রতান (বেত্রাঘাত) পাচ্ছে।
কুয়ালালামপুর বুকিত জলিল বন্দি শিবির থেকে মুক্তি পেয়েই আজমত উল্লাহ হোসেন মালয়েশিয়ার সাংবাদিক গৌতম রায়ের কাছে বর্ণনা করেন মালয়েশিয়ায় জেলের সাজার কথা। মালয়েশিয়ার জেলে এমন অনেক বাংলাদেশি আছেন যাঁরা কয়েক বছর ধরে সেখানে বন্দি। কিন্তু এ দেশে তাদের কোনো লোক না থাকায় দেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না।
আজমত জানালেন, দুর্ভাগা সেসব বন্দি জানে তাঁদের নামে নাকি মামলা আছে। কিন্তু কি মামলা ওরা জানে না। জানতে চাইলে মারধর করা হয়।
আজমত বলেন, ‘মালেয়শিয়ায় আটক বিদেশিদের মধ্যে শতকরা ৯৫ জনই বাংলাদেশি। বাকিরা বিভিন্ন দেশের। সেখানে একটু এদিক সেদিক হলেই রড দিয়ে আঘাত করা হয়।’
খাবার দাবার যা দেওয়া হয় তাতে একটা কুকুরের পেটও ভরবে না। সকালে এক কাপ লাল চা আর এক টুকরো বনরুটি। দুপুরে একমুঠো ভাত ও একটা শুকনো মাছ। সন্ধ্যায় দুপুরের মতোই খাবার। সারাদিনে শুধু এ খাবার খেয়েই মাসের পর মাস পড়ে আছে অনেকে– এভাবেই জেল জীবনের কষ্টের কথা জানান আজমত।
কীভাবে আটক হলেন জানতে চাইলে আজমত বলেন, দেশে টাকা পাঠাতে গিয়ে গত ২০ মার্চ কোতারায়া এলাকায় ইমিগ্রেশনে আটক হন তিনি। ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় তাঁর মালিক তাঁকে মুক্ত করে আনেন।
আজমত জানান, জেলের ভেতর থেকে চোরাইভাবে ফোন করার ব্যবস্থা আছে। এ জন্য ৫ মিনিট কথা বলতে ৩০০ রিঙ্গিত (প্রায় ৬ হাজার টাকা) দিতে হয়। বাইরে থেকে কেউ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দিলে দিনও সময় মিলিয়ে ঠিক পেলে ফোন করতে পারে বন্দিরা। তিনি জানান, কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে ১০২ জন বাংলাদেশি সাত মাস ধরে জেলে আটক আছেন। আজমত বলেন, ‘আমি হাইকমিশনের কাউকে এ পর্যন্ত জেলের ওই ক্যাম্প পরিদর্শনে যেতে দেখিনি।’
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে যাতে হাইকমিশনের মাধ্যমে আটক শ্রমিকদের দ্রুত দেশে পাঠাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।