দুদক কর্মকর্তা ও সাংবাদিক সেজে শ্যালক-দুলাভাইয়ের অভিনব প্রতারণা
কখনো দুর্নীতি দমন কমিশনের বড় কর্মকর্তা আবার কখনো তারা দেশসেরা সংবাদমাধ্যমের অপরাধ বিষয়ক বড় সাংবাদিক। দুদকের ওয়েবসাইট থেকে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম, মোবাইলফোন নম্বর ও ঠিকানা জোগাড় করে, তাদের সঙ্গে এসব পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করত শালা-দুলাভাইয়ের নেতৃত্বে একটি চক্র। অভিযোগ থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে অভিযুক্তদের থেকে হাতিয়ে নিতেন টাকা, কখনো বানাতেন দুদকের ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদনও।
চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তাদের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিন বছর ধরে পারিবারিক এই ‘দুদক’ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
আজ সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়েছে। রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা দুদকের মামলার প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—চক্রের মূল হোতা ফিরোজ খান (৫২), তাঁর শ্যালক মো. হাসান মুন্না (২৮) ও মুন্নার শ্যালক মো. রিয়াজ (১৮)। এ সময় তাদের কাছে বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশনের সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র ও ভিজিটিং কার্ড এবং দুদক কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র দুদকের সহকারী পরিচালক ও সাংবাদিক পরিচয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, ওয়ার্ড কমিশনারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নিউজ হলে, সেগুলো বিস্তারিত জেনে নিত। এরপর দুদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাদের ফোন দিত। প্রথমে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলে অভিযুক্তদের মনোবল ভেঙে দিত। তারপর দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনের কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিত।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা এসব অপরাধে সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এই চক্রের সঙ্গে দুদকের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা আছে কি না, সে সব ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।’