মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে রাজ্যপালের মানহানির মামলা
ভারতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলা করা হয়। তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য এই মামলা করা হয়েছে।
রাজ্যপাল বলেছেন, ‘কেউ যদি আমার সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করে, তাহলে তাকে ভুগতে হবে।’ এর আগে পশ্চিমবঙ্গে কখনও পদে থাকা অবস্থায় কোনো রাজ্যপাল ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেননি।
সম্প্রতি বিধানসভা উপনির্বাচনে জিতে এসেছেন তৃণমূলের দুই প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেয়াত হোসেন। তাদের বিধায়ক হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করানোর জন্য রাজভবনে ডেকেছিলেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। কিন্তু তারা যাননি। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ওনার রাজভবনে কেন সবাই যাবে? রাজভবনের যে কীর্তি কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা যেতে ভয় পাচ্ছে। আমাকে কমপ্লেন করেছে।’
সায়ন্তিকা বলেন, ‘আমি রাজভবন যাব না। অনেক কিছু খুব সন্দেহজনক। আমাকে একা কেন ডাকা হলো?’
গত ২৯ জুন রাজ্যপাল বলেন, ‘মমতা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। আমি ব্যক্তি মমতার বিরুদ্ধে মামলা করব বলে ঠিক করেছি।’ এরপর তিনি মানহানির মামলা করেন। রাজ্যপাল বলেছেন, ‘এবার আদালতই সব ঠিক করুক।’
এ ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া বিজেপিনেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে ওই পদের গরিমা নষ্ট করতে পারেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেভাবে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন, তাতে এই মামলা করা ঠিক হয়েছে।’
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কিছু অভিযোগ এসেছে। তার ভিত্তিতে তিনি ওই কথা বলেছেন। এতে রাজ্যপাল পদের ওপর কোনো অমর্যাদার বিষয় নেই।’
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার রাজভবনের এক নারী কর্মী রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেছেন। ওই নারী এর আগে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেছিলেন।
পুলিশ সেই বিষয়ে খোঁজখবর করেছিল। রাজভবনের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছিল। ওই নারীকে পুলিশের কাছে আসতে বাধা দেওয়ার জন্য কয়েকজনের নামে পুলিশ মামলাও করে। তবে কলকাতা হাইকোর্ট বিষয়টির উপর স্থগিতাদেশ দেয়।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যপালের রক্ষাকবচের বিষয়টি নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ওই নারী। সংবিধানের ৩৬১ ধারা নিয়ে তিনি গাইডলাইন জারির অনুরোধ করেছেন। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ কলকাতা হাইকোর্ট শুনতে চায়নি।
তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, ‘এটা তো হওয়াই উচিত। রাজ্যপাল পদে থেকে অন্যায় কাজ করবেন, আইন তাকে ছুঁতে পারবে না সেটা হতে পারে না। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে। রাজ্যপাল পদ তো চিরকালীন নয়। সেটা গেলেই তাকে জেলে যেতে হবে।’
রাহুল সিনহা বলেছেন, ‘আদালতে যে কেউ যেতে পারে। এটা তৃণমূলের নাটক। নাটকটা করে তারা রাজ্যপালকে খুব একটা অপদস্থ করতে পারেনি। তৃণমূল হতাশ। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করায় মুখ্যমন্ত্রী বুঝলেন, তিনি আদালতে বিপাকে পড়বেন। তারপর তিনি এটা করলেন। মুখ্যমন্ত্রী যা করলেন তা স্বাস্থ্যকর নয়।’