রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি ও সেই ‘ছোট নদী’
সিরাজগঞ্জ শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি অবস্থিত। এ কাছারি বাড়িতে বাংলা সাহিত্যের অমর স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট সাতবার এসেছিলেন। শুধু তাই না, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে বসেই রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, বৈষ্ণব কবিতা, দুইপাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, হৃদয়, যমুনা, চিত্রা, চৈতালী, ইত্যাদি। গীতাঞ্জলী কাব্যের কাজও শুরু করেন। যাতে পরবর্তীতে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। তার পোস্টমাস্টার গল্পের 'রতন' চরিত্রও শাহজাদপুরে বসেই লেখা।
এছাড়াও ‘আমাদের ছোট নদী’ নামক বিখ্যাত কবিতাখানা এই কাছারি বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী দেখেই লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাই এটি শুধু একটি বাড়ি বা স্থাপনা নয়; এটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক অনন্য স্মৃতিচিহ্ন।
জানা যায়, ১৮৪২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংরেজদের কাছ থেকে প্রথম বাড়ীটি কিনেছিলেন। এরপর এখান থেকে ঠাকুর পরিবারের জমিদারি তদারকি করা হতো।
রবীন্দ্র কাছারি বাড়িটির মূল ভবন দোতালা। কাছারি বাড়ির স্থাপত্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা ও স্থায়িত্বের ছাপ। বর্তমানে এ ভবনটি জাদুঘর হিসেবে রয়েছে। এবং দুইতালা মিলে ভবনে মোট ১৬টি কক্ষ রয়েছে। এই ১৬ কক্ষকেই সংরক্ষিত রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত টেবিল, চেয়ার, সোফাসেট, পালকি, পালংকসহ চঞ্চলা ও চপলা নামের তার ব্যবহার করা দুটো স্পিডবোট এবং তাঁর লেখা পত্রাবলি। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটবেলা থেকে মৃত্যুশয্যায় ছবি পর্যন্ত এখানে সংরক্ষিত আছে।
বাড়ির প্রতিটি কোণ যেন অতীতে ফিরে যাওয়ার এক দরজা খুলে দেয়। বাড়ির সামনে রয়েছে মনোরম একটি বাগান ও তালগাছ, যেখানে বসে কবিগুরু প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতেন।
সেই ছোট নদীর মুগ্ধতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতাটি এ কাছারি বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীটি নিয়েই লেখা। মূলত এ নদীটির নাম হুলহুলিয়া নদী। যদিও সময়ের সাথে সাথে নদীটির প্রবাহ এখন নেই বললেই চলে। তবে নদীটির কাছে গেলে তার অতীতের রূপ আজও অনুভব করা যায়। নদীটি বাঁকানো পথে চলত, যা কবিতায় অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে।
"আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে,
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।"
নদীর স্নিগ্ধ বাতাস, নদীপারের সবুজ গাছগাছালি, এবং চারপাশের শান্ত পরিবেশ এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা এনে দেয়। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে শুনতে পারবেন সেই নদীর পুরোনো দিনের গল্প, যা রবীন্দ্রনাথের স্মৃতির সাথে আজও জীবন্ত।
প্রবেশমূল্য ও সময়
রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে প্রবেশ করতে হলে ২০ টাকা মূল্যে টিকেট কাটতে হবে। কাছারি বাড়ির প্রধান ফটকে টিকিট কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যায়। তবে সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ১০০ টাকা ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য টিকেটের মূল্য ২০০ টাকা। এছাড়াও এখানকার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হলে প্রতি ৬ ঘন্টায় ভাড়া ভ্যাটসহ ৬৯০০টাকা।
রবিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটি বাদে কাছারি বাড়ি সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে।
কীভাবে আসবেন?
ঢাকা থেকে শাহজাদপুরে পৌঁছানো অত্যন্ত সহজ। ঢাকা মহাখালী বাস টার্মিনাল অথবা গাবতলি থেকে শ্যামলী, আল-হামরা, এসআই, ইত্যাদি পরিবহনের বাসে সিরাজগঞ্জ আসতে হবে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গগামী যেকোনো পরিবহনে এসেও সিরাজগঞ্জ নামতে পারেন। এসি-ননএসিভেদে বাস ভাড়া ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা। তবে চাইলে ঢাকা কললাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনেও সিরাজগঞ্জ আসা যায়। তবে ট্রেনে আসার আগে অবশ্যই টড়েনের শিডিউল দেখে নিতে হবে।
সিরাজগঞ্জে আসার পর সিএনজি বা অটো রিকশায় মাত্র এক ঘণ্টায় শাহজাদপুর কাছারি বাড়ি পৌঁছানো যায়।
যেখানে থাকবেন
শাহজাদপুরে রাত্রীযাপনের জন্য তেমন কোনো হোটেল নেই। থাকতে হলে সিরাজগঞ্জ শহরে এসে থাকতে পারেন। শহরের হোটেল আল-হামরা, হোটেল আলিশান, হোটেল অনিক, জয়সাগর রেস্ট হাউজ ও ডাকবাংলোয় থাকতে পারেন। এসি-ননএসি ও বিভিন্ন সুবিধাভেদে এসব হোটেলে থাকতে হলে আপনাকে রাতপ্রতি গুনতে হবে ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা।