ঘুরে আসুন মধুপুরের রাবার বাগান
ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে? মাঝেমধ্যে প্রকৃতির বুকে হারিয়ে যেতে আমাদের সবারই ইচ্ছা করে! প্রকৃতির কাছাকাছি এলেই মন এক ধরনের প্রশান্তিতে ভরে যায়, কারণ প্রকৃতি আমাদের বিনম্র হতে শিক্ষা দেয়। শহুরে যান্ত্রিক জীবনের ফাঁকে একচিলতে সময়ের জন্য ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির এক অপরূপ নিবিড় মেলবন্ধন থেকে। বলছিলাম, টাঙ্গাইলের মধুপুরের পীরগাছা রাবার বাগানের কথা।
কাঁচা সবুজ রঙের পাতা। সুউচ্চ বৃক্ষের সারি। ঠিক যেন স্কেল দিয়ে মেপে মেপে একই সমান্তরালে লাগানো গাছগুলো। যতদূর চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। চারদিকে সবুজের সমারোহ। দেখলেই মন ভরে যায়। গাছগুলোর নাম রাবার গাছ। মধুপুরের পীরগাছা রাবার বাগানের এই সৌন্দর্য অকৃত্রিম। দুই ধারে হাজারো গাছ আর এরই মাঝখানে সুবিশাল পথ। পথ চলতে চলতে মনে হয়, এই পথ যদি শেষ না হতো!
বাগানটির অন্যতম সৌন্দর্য হলো এটি একেক ঋতুতে একেক রকম সাজে সজ্জিত হয়। শীতকালে গাছের সব পাতা ঝরে গিয়ে যেমন রিক্ত হয়, তেমনি বর্ষায় ফিরে পায় নতুন যৌবন। কিছুদূর এগিয়েই চোখে পড়ে বাগানের অফিস।
অফিসের পাশেই রয়েছে গেস্টহাউস। চারদিকে নানা রঙের ফুলের গাছ, তারই মাঝে একটি আধাপাকা ভবন। গেস্টহাউসে অনুমতি সাপেক্ষে থাকার সুযোগও মেলে তাতে। রঙিন চালের ছাউনিতে গেস্টহাউসটি যেন প্রকৃতিরই একটা অংশ। বৃষ্টির দিনে মেলে বৃষ্টিবিলাসের সুযোগ। এমন বর্ষার দিনে এক কাপ চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখার মজাই আলাদা। বাগানের প্রতিটি গাছের পাতা থেকে বৃষ্টি ঝরে পড়ার অপরূপ দৃশ্য আর টিনের গায়ে বৃষ্টি পড়ার শব্দ মিলে যেন ভিন্নধর্মী এক অনুভূতির সৃষ্টি করে। আর বাগানে জোছনা রাতে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এ সময় ভিন্ন রূপে সাজে বাগানের অপরূপ দৃশ্য।
অফিসের পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে কিছুদূর এগিয়েই দেখা যায় সুবিশাল কারখানা, যেখানে রাবারশিট তৈরি করা হয়। সকালে দুধের মতো সাদা কাঁচা রাবার সংগ্রহ করে জমা করে রাখা হয় বড় বড় হাউসে। সেখান থেকে নানা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মেশিনের ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করা হয় রাবারশিট। এই রাবারশিট শুকানো ও আগুনে তাপ দিয়ে লালচে ভাব না হওয়া পর্যন্ত তাপ দেওয়া হয়। প্রক্রিয়াগুলো সত্যিই অসাধারণ।
আমাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের যে সুবিশাল অংশ এই রাবার থেকে তৈরি, তার প্রস্তুতপ্রণালি দেখার মধ্যে এক ধরনের পুলকিত অনুভূতি পাওয়া যায়। মনে পড়ে যায় কবিতার দুটো লাইন, ‘বহুদিন ধরে বহুদেশ ঘুরে, দেখিতে গিয়েছিলাম পর্বতমালা। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দু’পা ফেলিয়া, একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু’। বাগানের মাঝামাঝি জায়গায় দেখা যায় গারোদের বসতি ও তাদের সংগ্রামী জীবন। বাগানের শেষভাগে দেখা মিলে মধুপুরের গড়। এদিকে কিছু বন্য পশুপাখি দেখা যায়, বিশেষ করে বানরের। তবে হাতে খাবারের দ্রব্যাদি নিয়ে এদিকে প্রবেশ না করাটাই ভালো। বনের গভীরে প্রবেশের আগে স্থানীয় ও টহলরত পুলিশদের জানিয়ে রাখা ভালো।
রাবার বাগান সম্পর্কিত কিছু তথ্য
সর্বপ্রথম রাবার গাছ আবিষ্কার করেন স্যার হেনরি উইকহ্যাম আমাজান নদীর অববাহিকা থেকে ১৮৭৬ সালে। আর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম রাবার চাষ শুরু হয় ১৯৬১ সালে কক্সবাজারের রামুতে সরকারি উদ্যোগে। ৩০০০ একর আয়তনের মধুপুর পীরগাছা রাবার বাগানটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে। বাগানটিতে রাবার গাছের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৫৪ হাজার। শুধু রাবার গাছই নয়, এর পাশাপাশি নানা ধরনের ফল ও ফুলের গাছও রয়েছে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা মহাখালী থেকে সরাসরি মধুপুরের বাস রয়েছে। ভাড়া বাসভেদে ২০০-৩০০ টাকা। মধুপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রাবার বাগান ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বাসস্ট্যান্ড থেকে রাবার বাগানে অটোরিকশা, সিএনজি অথবা মোটরসাইকেলে করে যাওয়া যায়। ভাড়া অটোরিকশায় ২৫-৩৫ টাকা। তবে মোটরসাইকেলে ভাড়া একটু বেশি হলেও বাগানের ভেতর ঘোরার জন্য মোটরসাইকেলই সবচেয়ে ভালো। পুরো বাগান ঘোরার জন্য মোটরসাইকেলে ৩০০-৬০০ টাকা নিতে পারে।
যেখানে থাকবেন
রাবার বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কিছুদিন থাকতে চাইলে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশেই কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। ভাড়া কক্ষভেদে ২০০-৫০০ টাকা। তবে বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে বাগানের গেস্টহাউসে থাকার সুযোগ রয়েছে।