রম্য
তাদের বাজেট!
দেশে নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশ পুরো সরগরম। অর্থমন্ত্রীর মতো ‘তারা’ও যদি বাজেট পেশ করতেন, তবে কেমন হতো?
গৃহকর্তার বাজেট
বাজেট পেশের এই সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি! কেননা, যে সংসারে একনায়নকতন্ত্র চলে, সেই সংসারে বাজেট পেশের সুযোগ তো রীতিমতো অবিশ্বাস্য! যাকগে, সংসারের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাজেট পেশ করছি। আপনারা সবাই জানেন, গত অর্থবছরে সংসারের বাজেটে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি ছিল। সেই ঘাটতি মেটাতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে হয়েছে। নতুন অর্থবছরে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এজন্য এবারের বাজেটে শপিং খাতে বরাদ্দ অর্ধেক করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। এজন্য এবার বাজে খরচ চলবে না; যেমন- ঘন ঘন বাপের বাড়ির লোকদের শ্বশুরবাড়িতে আনা যাবে না!
গৃহকর্ত্রীর বাজেট
সংসারের অকর্মণ্য কর্তাসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাজেট পেশ করতে যাচ্ছি। তবে এই ফাঁকে বলে রাখতে চাই, সংসারের কর্তা নামধারী ব্যক্তি তার নিজস্ব মনগড়া বাজেট পেশের সময় যে বক্তব্য রেখেছেন, সেজন্য তাকে যথাসময়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। যাকগে, এবারের বাজেটে আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি শপিং খাতে। এ খাতে গতবছর অর্থ বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। যে কারণে পাশের বাসার ভাবির সাথে পাল্লা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য এবার এ খাতে গতবারের চেয়ে বরাদ্দ তিনগুণ বেশি করা হচ্ছে। এ ছাড়া এবারের বাজেটে আমি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি বাপের বাড়ির লোকদের। আমার শ্বশুরবাড়িতে তাদের আসা-যাওয়া, খাওয়াসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়াদির জন্য এবার এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এবারের বাজেটে কোনো কাটছাঁট করার কথা যেন কল্পনায়ও চিন্তায় না আনেন ঘরের তথাকথিত কর্তা।
গৃহকর্মীর বাজেট
বাজেট কী এটা আসলে আমার মাথায় ধরে না। সুতরাং, বাজেট পেশের সুযোগ পেয়ে আমি খুশি না বেজার হমু, সেটা বুঝতে পারছি না! যাউকগা, সুযোগ যখন পেয়েছি এবং দুজনের বাজেট পেশ শুনেছি, সে হিসেবে আমি বলতে চাই, এবারের বাজেটে আর যাই হোক, আমার বেতন কিন্তু দ্বিগুণ হচ্ছেই! একইসাথে বাজেটে টিভি সিরিয়াল দেখা বাবদ বিশেষ বরাদ্দ, আলতা, লিপস্টিক কেনার জন্য বরাদ্দ, পাশের বাসার কুদ্দুসের সাথে দেখা করার জন্য বিশেষ বরাদ্দও থাকছে! বাজেট বাস্তবায়িত না হলে কাজের মেয়াদও দীর্ঘায়িত হবে না!
প্রেমিকের বাজেট
‘পরাণ যায় জ্বলিয়ারে....’ এই গানের মতোই আমার পরাণটা আজ জ্বলেপুড়ে ছারখার! বাজেট আর কী পেশ করমু! আমার জীবনের বাজেটই তো প্রেমিকা নামক হস্তিনীর পেছনে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে! গতবছর যে বিশাল অঙ্কের বাজেট ঘোষণা করেছিলাম, সেই বাজেটের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে প্রেমিকার পেছনে! সেজন্য এবার আর বাজেটের ধার ধারছি না! তবে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলতে হয়, এ বছর প্রেমিকার পেছনে বাজেট গতবছরের চেয়ে অনেক কম হবে। কেননা, ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধির অবস্থা খুবই খারাপ! তারওপর বাপের পকেট মারিংও ইদানীং হুমকির মুখে!
প্রেমিকার বাজেট
আমার আবার বাজেট! হা হা হা! আমার বাজেট মানেই তো খালি সঞ্চয় আর প্রবৃদ্ধি! প্রেমিক পুরুষ আবুল মদন কুদ্দুস থাকতে আমার আবার নিজস্ব বাজেটের কী প্রয়োজন! তবু, বাজেট পেশ যেহেতু করতেই হয়, সেহেতু বলতে চাই, এবার আমার বাজেটে শপিং খাত ও থাই, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান ফুড খাওয়া খাতে ব্যয় বাড়বে। একইসাথে আমার পছন্দের জিনিস আমাকেই গিফট করার ক্ষেত্রে আবুল মদন কুদ্দুসের ব্যয় গতবারের চেয়ে খানিকটা তো বাড়বেই!