ইন্টারনেট আসক্তিতে ঘুম কাজ ব্যাহত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিনোদনসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ এখন অনেক সময়ই কাটায় অনলাইনে। অনেকের ক্ষেত্রে এই ইন্টারনেট ব্যবহার আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন আসক্তির কারণে ঘুমের সময় ও ঘরবাড়ির কাজ করা কমেছে এবং বন্ধু ও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎও কমেছে।
যুক্তরাজ্যে মানুষের অনলাইন ব্যবহারের ওপর করা এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। সমীক্ষাভিত্তিক গবেষণাটি করেছে গণমাধ্যম ও টেলিযোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম।
দৈনিক গার্ডিয়ান জানায়, যুক্তরাজ্যের দুই হাজার ৫০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এবং ৫০০ কিশোর-কিশোরীদের কাছ থেকে তথ্য নেয় অফকম।
অফকমের বার্ষিক যোগাযোগ প্রযুক্তির বাজার প্রতিবেদনে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকরা প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২৫ ঘণ্টাই অনলাইনে সময় কাটায়। ২০০৫ সালে এই সময় ছিল মাত্র নয় ঘণ্টা।
যুক্তরাজ্যের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এক-তৃতীয়াংশের দাবি, ইন্টারনেট তাঁদের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ। ৫৯ শতাংশ ব্যবহারকারীর দাবি তাঁদের ব্যবহৃত যন্ত্রের মাধ্যমেই তাঁরা অনলাইনে যুক্ত থাকেন।
যুক্তরাজ্যের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনেকে সশরীরে সাক্ষাতের চেয়ে বার্তা বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
যুক্তরাজ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অনেকেই নিজেদের অনলাইন আসক্তি সম্পর্কে জানেন। প্রতি ১০ জনের মধ্যে চারজনই ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মনে করেন, তাঁরা ইন্টারনেটে বেশি সময় কাটাচ্ছেন। ৪১ শতাংশ ব্যবহারকারীই এই দলের। ৪৮ শতাংশ মনে করে অনলাইনে বেশি সময় কাটানোর ফলে তাঁদের ঘরবাড়ির কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ৪৭ শতাংশ দাবি করে ঘুম কমে গেছে তাঁদের। প্রতি তিনজনের একজনের দাবি তাঁরা পরিবার ও বন্ধুদের কম সময় দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশের দাবি, স্কুলের কাজ করা থেকে তারা বিরত থাকছে। আর তিন ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থী রাতে অনলাইনে থাকার কারণে স্কুলে দেরি হওয়ার কথা জানায়।
অফকমের বাজার গবেষণাবিষয়ক পরিচালক জেন রাম্বল বলেন, যুক্তরাজ্যবাসী ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মধ্যে সম্পর্ক সহজ নয় বরং বেশ জটিল। তিনি বলেন, অনলাইনে থাকার অনেক ইতিবাচক দিক আছে। তবে মানুষ এর জীবনের অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এর ব্যবহারের ভারসাম্য নিয়ে ভাবছে।
যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকার প্রচেষ্টা
অফকম জানায়, গত এক বছরে ব্রিটেনের এক কোটি ৫০ লাখ মানুষ কোনো না কোনো সময় যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকার চেষ্টা করেছে। কেউ হয়তো সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটি দিন যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থেকেছেন। অনেকেই বাড়িতে মোবাইল ফোনটিও রেখে অন্য কোথাও চলে গেছেন। অনেকে আবার টেলিফোন লাইন নেই এমন জায়গায় চলে যান।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কিশোর-কিশোরীদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মনে করেন, ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা অসম্ভব। ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬১ শতাংশ জানান, অভিভাবকরা তাঁদের জোরপূর্বক ইন্টারনেট থেকেও বিচ্ছিন্ন রাখার ঘটনাও ঘটেছে। তাঁদের অভিযোগ অনলাইনে না থাকলে নিজেদের হারিয়ে যাওয়ার মতো মনে হয়।
ইন্টারনেটবিচ্ছিন্ন থাকা অধিকাংশ ব্যক্তিই একে ইতিবাচক বলে দাবি করেন। এক-তৃতীয়াংশ মনে করেন, তাঁদের কার্যক্ষমতা বেড়েছে। চার ভাগের এক ভাগ মনে করেন, তাঁরা জীবনকে উপভোগ করেছেন। তবে অনেকেই একে সমস্যার বলেও দাবি করেন। ১৬ শতাংশের দাবি, ইন্টারনেট ছাড়া থাকা নিজেদের বিচ্ছিন্ন মনে হয়। ৮ শতাংশ এমন অবস্থায় উদগ্রীব হয়ে পড়ার দাবি করেন।
বয়সভেদে ইন্টারনেট সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন
ইন্টারনেটের মধ্যে দিয়ে যারা বড় হয়েছে, অনলাইনে থাকাকে ততটা সমস্যা হিসেবে দেখে না তারা। অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট বুঝে নেওয়া বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই একে সমস্যা হিসেবে দেখেন।
গবেষক জেন রাম্বল বলেন, যুক্তরাজ্যের কিশোর-কিশোরীরা অনেকে অনলাইনেই বড় হয়েছেন। তাঁরা একে সমস্যা হিসেবে দেখেন না। কারণ তাঁরা এটি ছাড়া জীবন সম্পর্কে অতটা জানেনও না।
অনলাইনে সিরিয়াল, নাটক দেখার হার বেড়েছে
যুক্তরাজ্যের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে টিভি ছেড়ে অনলাইনে সিরিয়াল নাটক দেখার হার বেড়েছে। এমন সেবা দেওয়া নেটফ্লিক্স, আমাজানের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এ জন্য পছন্দের শীর্ষে।
অফকমের হিসেবে, ২০১৫ যুক্তরাজ্যের ২৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক অন্তত একদিন নেটফ্লিক্স দেখতেন। এর আগের বছরের চেয়ে যা ১৩ শতাংশ বেশি। আমাজানসহ অন্যান্য টিভি দেখার প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এই হার বেড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্রেকিং ব্যাড, অরেঞ্জ ইজ দি নিউ ব্লাকের মতো কিছু নামকরা এবং নিজস্ব তৈরি সিরিয়ালের কারণে অনলাইনে টিভি দেখার হার বেড়েছে। চলতি বছর নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজান নিজস্ব সিরিয়াল তৈরিতে হাজারকোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগও করছে।