দেখি ছোট ছবি
আব্বাস কিয়ারোস্তামির ‘কোরাস’
প্রখ্যাত ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির পাশাপাশি কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিও নির্মাণ করেছিলেন। কোরাস ছবিটি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ১৯৮২ সালে নির্মিত ছবিটির ইরানি নাম ‘হামসারায়ান’ (Hamsarayan)।
১৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটির মূল চরিত্র এক বধির বৃদ্ধ। কানে কম শোনার কারণে তিনি হিয়ারিং এইড ব্যবহার করেন। ছবির শুরুতে দেখা যায়, ইরানের গিলার প্রদেশের এক রাস্তায় এই বৃদ্ধ হেঁটে বেড়াচ্ছেন। শহরটির বিভিন্ন রাস্তা ও গলিতে তিনি নানা রকম শব্দ শুনতে পান। বাসায় ফিরে তিনি তাঁর নাতনির স্কুল থেকে ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও নাতনি ফিরে না আসার দুশ্চিন্তায় পড়ে যান সেই বৃদ্ধ। অথচ তাঁর নাতনি সময়মতোই বাড়ি ফিরে সদর দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। বারবার কলবেল বাজালেও বৃদ্ধ শুনতে পান না। তিনি রাস্তায় শব্দ হচ্ছে বলে কান থেকে হিয়ারিং এইড সরিয়ে রেখেছিলেন। ওদিকে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর নাতনির স্কুলের বন্ধুরা মিলে বাসার নিচে জড়ো হয়ে সম্মিলিতভাবে দাদাকে দরজা খোলার জন্য অনুরোধ করতে থাকে। ধীরে ধীরে আরো মানুষ জমতে থাকে। একসময় বৃদ্ধের কানে হালকাভাবে সে আওয়াজ পৌঁছায়। তিনি বুঝতে পারেন তাঁর হিয়ারিং এইডটা কানে নেই। হিয়ারিং এইডটা কানে দেওয়ার পর বাইরের শব্দ শুনতে পান এবং জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখেন সবাই তাঁকে দরজা খোলার জন্য অনুরোধ করছে।
৭৬ বছর বয়সে গত ৪ জুলাই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মারা যান কিয়ারোস্তামি। ক্যানসার চিকিৎসার জন্য তিনি প্যারিসে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত মার্চে কিয়ারোস্তামির শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। ১৯৭০ সাল থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন কিয়ারোস্তামি। তিনি ৪০টির মতো চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। ১৯৯৭ সালে ‘টেস্ট অব চেরি’ ছবির জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘পাম দ’ওর’ পুরস্কার জিতেছিলেন। তিনি একমাত্র ইরানি, যিনি চলচ্চিত্রের এই সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
আব্বাস কিয়ারোস্তামির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে—কইকার ট্রিলোজি (১৯৮৭-৯৪), ক্লোজ-আপ (১৯৯০), উইন্ড উইল কেরি আস (১৯৯৯), সার্টিফাইড কপি (২০১০), লাইক সামওয়ান ইন লাভ (২০১২)।
ইরানি নির্মাতা হলেও কিয়ারোস্তামি বিশ্ব চলচ্চিত্র দ্বারা যেমন প্রভাবিত ছিলেন, তেমনি তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্মাতাদের প্রভাবিত করেছে। প্রখ্যাত ফ্রেঞ্চ-সুইস চলচ্চিত্র নির্মাতা জ্যঁ লুক গদার বলেছিলেন, ‘চলচ্চিত্র শুরু হয়েছে ডি ডব্লিউ গ্রিফিতকে দিয়ে আর শেষ হয়েছে আব্বাস কিয়ারোস্তামিকে দিয়ে।’