শোকের কথা
বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের পূর্বাপর
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বাংলাদেশ ইত্যাদি প্রত্যেকটি শব্দ আজ সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো একটির সাথে আরেকটি খুবই নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। তারমধ্যে প্রথম শব্দ বঙ্গবন্ধুই অন্য সবগুলোর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে। কিন্তু পার্থিব জগৎ থেকে তাঁর দেহতাত্ত্বিক বিদায় হলেও মুছে দিতে পারেনি চেতনা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেশকিছু জনপ্রিয় এবং হৃদয় বিদারক গান রচিত হয়েছে। ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই...’ এমন আশাবাদী করুণ আকুতির গানও রচিত হয়েছে আমাদের প্রিয় জাতির পিতাকে নিয়ে।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখতে গেলে এক ধরনের আবেগ মনের মধ্যে কাজ করে। এত বিশাল ব্যক্তিত্বের, কর্মযজ্ঞের, নেতৃত্বের, যুগান্তরের ইতিহাস সৃষ্টিকারী একজন মানুষকে নিয়ে লেখার সময় সেজন্য শুধু মনে হয় তাঁর কোনটা বাদ দিয়ে কোনটা নিয়ে লিখি। আর ১৫ আগস্ট এমন একটি মানুষের পার্থিব ইহ জীবনের যবনিকাপাত ঘটবে তা কেউ কোন দিন কল্পনা কিংবা চিন্তাও করেনি। এবার ২০১৬ সালে প্রতিবারের মতো আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের তরফে এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের তরফ থেকে শোকের আগস্ট মাসে মাসব্যাপী তাঁর ৪১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত হচ্ছে।
আমি আজকে বঙ্গবন্ধুর ৪১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রধানত দুটি দিক নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। তারমধ্যে একটি হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পূর্বপর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এই দেশ মাতৃকার জন্য কী করেছিলেন এবং দ্বিতীয়টি হলো এদেশে যদি ১৫ আগস্টের ঘৃণ্য সে ঘটনাটি না ঘটত তাহলে বাংলাদেশের কী হতো। প্রথম বিষয়টি এত বিশাল যে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা কঠিন। তারপরও শুধু প্রেক্ষাপটটিই একটু তুলে ধরছি।
বঙ্গবন্ধু এ ভূ-খণ্ডে হঠাৎ করে গজিয়ে উঠা কোন নেতা নন। তিনি যে বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা, দেশবন্ধু, বাংলাদেশের স্রষ্টা, স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীনতার মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা ইত্যাদি কত অভিধাতেই না তাঁকে ডাকা হয়। কারণ এগুলো কেউ তাঁকে সেধে সেধে দেয়নি। প্রত্যেকটি তিনি নিজে তাঁর জীবন দিয়ে অর্জন করেছিলেন। মোট কথা হলো তিনি আজন্মই একজন মজলুম জননেতা হয়ে উঠছিলেন। কী তাঁর গ্রামের স্কুলে পড়াকালীন, কী পড়াশুনায়, কী খেলাধুলা করার সময়, কী ছাত্র রাজনীতি করার সময়, কী ছাত্রলীগ ও আওয়ামীগ গঠন করে সাংগঠনিক পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রে- এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে তিনি কাজ করেন নি। প্রতিটি কাজেই তিনি সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছেন।
এক সময় ব্রিটিশ শাসিত সর্বভারতের উপমহাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ শিষ্যত্ব বরণ করেছিলেন এবং একসময় রাজনৈতিক দৌঁড়ে তিনি সবার থেকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, তোফায়েল আহমেদ, আমীর হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, আসম আব্দুর রব, শেখ ফজলুল হক মনি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শাহজাহান সিরাজ, আব্দুল কুদ্দুছ মাখন, নুরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখসহ আরো অনেক সরাসরি রাজনৈতিক ভাবশিষ্য তিনি তৈরী করতে পেরেছিলেন। তাদেরকে সাথে নিয়েই বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন।
১৭৫৭ সালে পলাশী প্রান্তরে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইংরেজ লর্ড ক্লাইভের বাহিনীর সাথে এদেশীয় দোসর মীর জাফর আলীর বেঈমানীর কারণে সিরাজদ্দৌলা পরাজয় বরণ করেছিলেন। তখন থেকেই পাক-ভারত উপমহাদেশ ইংরেজদের দখলে চলে যায়। তারপর প্রায় দুশো বছর ইংরেজ বেনিয়াদের শাসন-শোষণের ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ সামন্তবাদীদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হওয়ার জন্য বিচ্ছিন্ন আন্দোলন হতে থাকে। সেসব আন্দোলনকে দমন করার অংশ হিসেবে ইংরেজরাও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির করেছে। আশ্রয় নিয়েছে অনেক কৌশলেরও। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ শুরু হয়।
পরে আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য ১৯০৬ সালে মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তখন কিছু আন্দোলনের ফলে ১৯১১ সালে আবার সেই বঙ্গবঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেই মুসলিমলীগ ১৯৪৯ সালে হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ যার একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তখনকার তরুণ নেতা শেখ মুজিব। অতঃপর ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৫৮ সালে আইয়ুবশাহীর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্রের জন্য ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি ১৯৭১ সালের নয়মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিটি কাজের সাথে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ দিক-নির্দেশনা ছিল।
এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজের যোগ্যতা বলে ১৯৫৫ সালে আওয়ামীলীগের সাথে থাকা মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে একটি ধর্মরিপেক্ষ দল হিসেবে আওয়ামীলীগকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পান এবং ১৯৫৭ সালে তিনিই দলটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দলে কাজ করার জন্য তিনিই ইতিহাসের সেই ব্যক্তি যিনি সেচ্ছায় মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করেছিলেন। এর ভেতরেই ১৯৬৬ সালে তিনি আবার দলটির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৯৬৬ তে ঐতিহাসিক ছয়দফা ঘোষণা করেছিলেন। বাঙালির স্বাধীনতা ইতিহাসে সেই ছয় দফাই হলো প্রকৃতপক্ষে বাংলার মুক্তির সনদ। মুক্তিযুদ্ধে বীর বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এবং দিক-নির্দেশনামূলকভাবে আকার-ইঙ্গিতে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ১৭-১৮ মিনিটের এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণের কারণে সারাবিশ্বে বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি (পয়েট অব পলিটিকস) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এরপরে তাঁর কারারুদ্ধ হওয়া, নয়মাস তাঁর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলা, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ দেশ স্বাধীন হওয়া, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ তাঁর স্বাধীন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন- ইত্যাদি ঘটনা পরম্পরা বাঙালি মাত্রই জানা। কিন্তু আড়ালে-আবডালে প্রকৃত ঘটনা ঘটতে থাকে এরপর থেকে। তিনি সদ্য স্বাধীন হওয়া তাঁর প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবাসার দেশটিতে ফিরে এসেই আবার সকলকে নিয়ে ঐক্যের ডাক দিয়ে দেশ পূণর্গঠনের কাজ শুরু করার আহবান জানান। দেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারত-রাশিয়াসহ অনেক দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছে ঠিকই, কিন্তু তখনো ভারতের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্থলসীমায় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিল। কিন্তু তিনি সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যহারের বিয়য়ে অনুরোধ করেছিলেন।
তখন বিশ্বনেতারা শেখ মুজিবের সাহসের তারিফ করেছেন। আর সেই থেকেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আর পিছিয়ে থাকতে হয়নি। সবাই লৌহমানবসম বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তখন বিশ্বনেতৃত্ব বাংলাদেশ সাহায্য-সহযাগিতার হাত প্রসারিত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখানে তিনি একটু রক্ষণশীল ছিলেন। কারণ তিনি মনে করতেন বাংলাদেশ যেন একটি ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি না পাক। তিনি একটি তাঁর নিজের একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমরা যদি কোন ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিই, তখন সেইসাথে তাকে একটি গলাধাক্কাও দিই। অর্থাৎ কারো কাছে ভিক্ষুকের কোন মর্যাদা থাকেনা। সেরকম একটি দেশের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। কাজেই আমরা বিশ্বে আমাদের দেশকে সাহায্য চেয়ে চেয়ে ভিক্ষুকের জাতিতে রূপান্তর করতে পারি না, আর আমি নিজেও কোন ভিক্ষুক দেশের নেতা হয়ে থাকতে চাইনা।’
তিনি সকলকে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য কৃষি কাজে, শিল্পে-কল-কারখানায়, শিল্প, সংস্কৃতি-সাহিত্যে, শ্রমজীবী থেকে বৃদ্ধিজীবী সবাইকে যার যার কাজে সফলভাবে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য আহবান জানিয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পাশাপাশি দেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত সন্ত্রাসমুক্ত প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ দিতে চেয়েছিলেন দেশবাসীকে। সেটির প্রমাণ, তিনি তাঁর সাড়ে তিনবছরের শাসনকালে প্রত্যেকটি স্থানে স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন সফলভাবে। তিনি দেশের জন্য রাতে-দিনে কাজ করতে করতে এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন যে, তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যদি কখনো তাঁকে চলাফেরায় সাবধানতা অবলম্বন করতে বলতেন, তখন তিনি রাগ করে বলতেন আমাকে, ‘এদেশে আমাকে কেউ মারতে আসবে না’। তাঁর কঠিন আত্মবিশ্বাসের কারণে তিনি রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবনে না থেকে তাঁর নিজের বাড়ি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরেই থাকতেন। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাজিত প্রতিবিপ্লবী শক্তিরা তো বসে থাকে নাই। তারা যথারীতি নিরবে-নিভৃতে ঘাপটি মেরে থেকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বলেই মনে করা হয়।
পরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে পড়ে তথাকথিত সুবিধা বঞ্চিতরা সব একাট্টা হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ইতিহাসের সেই ঘৃণ্য ঘটনাটি ঘটানোর সাহস করে খুনিরা। সেদিন যে সেখানে শুধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করেছিল তাই নয়, হত্যা করা হয়েছিল তাঁর সহধর্মিনী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও মাত্র ১১ বছর বয়সের শিশুপুত্র শেখ রাসেলকে। হত্যা করেছিল ছেলের বউ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ আবু নাসের, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, বেগম আরজু মনি, সুকান্ত বাবু, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিলসহ আরো অনেককে। তখন শেখ হাসিনার স্বামী বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার উচ্চশিক্ষার্থে জার্মানিতে অবস্থান করার কারণে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান বাংলাদেশের সফল ও জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যতম সমাজসেবী শেখ রেহানা।
এখন আসা যাক যদি এদেশে ১৫ আগস্টের মতো একটি ঘৃণ্য ঘটনা না ঘটত তাহলে কী হতো। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে পরিচালিত স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রভুত উন্নতির কথা জানি। আমাদের এশিয়া মহাদেশের মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশের উদাহরণ একেবারে চোখের সামনে জাজ্বল্যমান। তারা তাদের স্বাধীনতার মাত্র দুইযুগ সময়ের মধ্যে দেশকে ঈর্ষণীয় সাফল্যে উত্তোলিত করতে পরেছেন। বাংলাদেশ সৃষ্টির মাত্র সাড়ে তিনবছরে সেনা-বিমান-নৌবাহিনীর পুণর্গঠন, পুলিশ, বিডিআর পুণর্গঠন ও প্রতিষ্ঠাসহ প্রত্যেকটি নিরাপত্তা ও সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিজের কাঁধে নিয়ে সামনের দিকে এগোনোর জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে গেছেন। সেই ধারা অব্যাহত থাকলে স্বাধীনতার সাড়ে চারদশক পরে তাঁরই কন্যার আন্তরিকতায় আজকে দেশের অর্থনৈতিক যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা হতে এতদিন সময় লাগতো না। দেশের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আমাদের এতদিন অপেক্ষা করতে হতো না।
এখানে একটি বিষয়কে সবসময় অপপ্রচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু নাকি যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে তাদের বিচারের পথ রুখে দিয়েছিলেন। কিন্তু এটি নেহাতই একটি অপপ্রচার। কারণ বঙ্গবন্ধু ক্ষমা করেছিলেন যারা না বুঝে কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয়ে দেশের বিরোধিতা করেছিলেন শুধু তাদেরকে। তিনি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত এবং মানবতা বিরোধী অপরাধে অপরাধী এমন কাউকেই ক্ষমা করেননি। বরং তিনি এগুলো অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া শুরুও করেছিলেন। ১৫ আগস্ট না ঘটলে বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অপরজন শেখ রেহানাকে কষ্ট করে বিদেশের মাটিতে থাকতে হতো না।
বিশ্ব দরবারে বহু আগেই আমরা একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পরিগণিত হতে পারতাম। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তার সবটুকুতেই তারা সফলতা অর্জন করতে পারেনি। তাই হয়তো দেশবাসীর সৌভাগ্যের কারণেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্টসহ এ পর্যন্ত প্রায় একুশবার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র এখানো থেমে নেই। এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসরামের একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। কারণ তিনি আবার বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনার জীবন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন যা নিয়ে দেশের স্বার্থেই আমাদের সকলকে সতর্ক থাকার প্রয়োজন। এ সতর্কতা ও তদানুযায়ী প্রতিরোধ শক্তি অর্জনই হোক এবারের শোকের আগস্টের আরেক শপথ।
লেখক: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়