শিউলি দেখার আগেই ঝরে গেলেন আফসানা
বাড়ির উঠোনে লাগানো শিউলি গাছটা আর বেঁচে নেই। শুনে মন খারাপ হয়েছিল আফসানা ফেরদৌসের। ছোট বোন আফিয়া আরফিনকে বলেন, ‘ওকে আর বাঁচানো যাবে না?’ বোনের কাছে আবদার করেছিলেন আফসানা, ‘কোরবানির ঈদে গিয়ে ওই রকম একটি শিউলি গাছ দেখতে চাই।’
শিউলি গাছ দেখার আগেই ঝরে যেতে হয়েছে আফসানা ফেরদৌসকে। গত শুক্রবার আফসানার সঙ্গে শেষ কথা হয় ছোট বোন আফিয়ার। উঠোনের কাছেই নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকার কানিকশালগাঁও গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে আফসানাকে।
গত শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আফসানার স্বজনরা তাঁর লাশ খুঁজে পান। ঢাকার মিরপুরের সাইক ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্রী ছিলেন আফসানা। তিনি ছিলেন স্থাপত্যবিদ্যার শেষ বর্ষের ছাত্রী। ঢাকায় একাই থেকে পড়াশোনা করতেন তিনি।
গত শনিবার রাতে এক অজ্ঞাত ফোন যায় ঠাকুরগাঁওয়ে আফসানার মা সৈয়দা ইয়াসমিনের কাছে। ঢাকায় বাস করা আফসানাদের স্বজন তৌফিক এলাহী বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজখবর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আফসানা ফেরদৌসের লাশ পান। রোববার আফসানা ফেরদৌসের লাশ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকার কানিকশালগাঁও গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
আফসানা হত্যাকাণ্ডের জন্য তাঁর স্বজনরা তেজগাঁও কলেজের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিনকে দায়ী করেছেন। স্বজনদের দাবি, রবিনই আফসানাকে হত্যা করেছেন। এমনকি বিষয়টি ‘মীমাংসার’ জন্য রবিনের পরিবার চাপও দিচ্ছে। তবে রবিনের যথাযথ শাস্তি দাবি করেছেন আফসানার স্বজনরা।
এ বছরই মারা যান আফসানার বাবা আখতার হোসেন। এরপর থেকে আফসানার চাচা ও ফুফারাই ওই পরিবার দেখাশোনা করছেন।
আফসানার চাচা আবুবকর বলেন, রবিনের পক্ষ থেকে ওর বাবা ও মা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু আমরা তা করব না। এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সে-ই। আমরা এর বিচার চাই।’
ঠাকুরগাঁওয়ে আজো বিক্ষোভ
এ দিকে আফসানা হত্যার বিচারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবারও ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
দুপুর ১২টার দিকে শহরের চৌরাস্তা মোড়ে ঠাকুরগাঁও এলাকাবাসীর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিককর্মী, সাংবাদিক, নারীনেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।
এ সময় বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি আফরোজা পারভিন রিকা, সাধারণ সম্পাদক সুচরিতা দেব, প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তোরাব মানিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুনাংশু দত্ত টিটো, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার পারভেজ পুলক, কাউন্সিলর দ্রৌপদী দেবী আগরওয়ালা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আফসানা ফেরদৌসকে ধর্ষণের পর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু একটি মহল একে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডের পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। উল্টো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তাঁরা। নইলে আগামীতে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।