ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় হিন্দুরা
হবিগঞ্জে ঈদুল আজহার জামাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও মুসল্লিদের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একে বাঙালির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের সবার গায়েই ‘ঈদ মোবারক, স্বেচ্ছাসেবক’ লেখা গেঞ্জি ছিল।
হিন্দু যুব মহাজোটের জেলা সভাপতি প্রদীপ দাশ সাগর জানান, আজ ঈদের দিনে বৃষ্টি থাকায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহে এক-চতুর্থাংশ মুসল্লিও হয়নি। তবে হিন্দু স্বেচ্ছাসেবকরা বৃষ্টির মধ্যেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এটা বাঙালির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চিরন্তর ঐতিহ্য। সব ধর্মের মানুষই এখানে শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করে।’
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা, হবিগঞ্জ পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পিযুষ চক্রবর্তী, হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, আলেয়া-জাহির কলেজের অধ্যক্ষ পার্থ প্রতীম দাশ, হিন্দু যুব মহাজোটের জেলা সভাপতি প্রদীপ দাশ সাগর, হবিগঞ্জ জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায় প্রমুখ। মূলত তাদের নেতৃত্বেই স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠের চারপাশে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।
হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরের আহ্বানে প্রশাসন গত শনিবার এ অভিনব উদ্যোগ নেয়। এদিন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সব মসজিদ ও ঈদগাহ কমিটির প্রতিনিধি এবং খতিবদের নিয়ে সভা হয়। হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এমরান হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির।
সেখানেই সংসদ সদস্য ঈদের প্রধান জামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। এ সময় সেখানে উপস্থিত হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতারা এতে সায় দেন।
সেই সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ স ম শামসুর রহমান ভূইয়া শামস, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হক, নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট পুণ্যব্রত চৌধুরী বিভু, অ্যাডভোকেট অহীন্দ্র কুমার দত্ত চৌধুরী, আলহাজ রইছ মিয়া, মাওলানা গোলাম মোস্তফা নবীনগরী, মাওলানা আবদুল মজিদ, মাওলানা নুরুল আমিন, অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটো প্রমুখ।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই পরদিন রোববার বিকেলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের নিয়ে সভা হয় এবং সেখানেই ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবকের তালিকা তৈরি করা হয়।
পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ স ম শামসুর রহমান শামস, জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, রাসেলুর রহমান, অ্যাডভোকেট পুণ্যব্রত চৌধুরী বিভু, অ্যাডভোকেট অহিন্দ্র দত্ত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটো, অনুপ কুমার দেব মনা, শঙ্খ শুভ্র রায়, গৌতম আচার্য্য, তুষার মোদক প্রমুখ।