হবিগঞ্জে জোড়া লাগা শিশুর জন্ম
হবিগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পেট ও বুক জোড়া লাগানো দুটি শিশুর জন্ম হয়েছে। গত মঙ্গলবার শিশু দুটির জন্ম হয়।
শিশু দুটির নাম রাখা হয়েছে টিয়া ও ময়না। জন্মের পর পঞ্চম দিনেও তাদের চিকিৎসা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পরিবার। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দ্রুত শিশুদের আলাদা করা দরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের নিউ লাইফ কেয়ার হাসপাতালে বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের মো. জলিল মিয়ার স্ত্রী জোৎস্না বেগম বুক জোড়া লাগানো দুটি শিশুর জন্ম দেন। শিশু দুটির অন্য সব অঙ্গ ঠিকঠাক আছে। তবে সমস্যা পেট ও বুকে। এ দুটি অঙ্গই তাদের জোড়া লাগানো।
যমজ শিশুর বাবা আব্দুল জলিল জানান, জন্ম নেওয়ার পর পরই নবজাতক দুটিকে তাঁরা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. কায়সার রহমানের কাছে দেখিয়েছেন। চিকিৎসক শিশুদের ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পাঠানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা করতে গেলে যে টাকা প্রয়োজন, তা তাঁর পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। তিনি সন্তানকে বাঁচাতে চান। এ জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।
যমজ শিশুদের মা জোৎস্না বেগম বলেন, শত কষ্টের মধ্যেও সন্তান জন্মের পর যে আনন্দ তিনি পেয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে তাদের দুর্দশা দেখে। তিনি সন্তানদের বাঁচাতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।
নিউ লাইফ কেয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান এহতেশামুল হক শামীম জানান, তাঁদের মাধ্যমে সিলেটের জালালাবাদের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও পেডিয়াট্রিক সার্জন ডা. এম এ মুমিন রাসেল শিশুদের দেখে গেছেন। চিকিৎসকরা যতটুকু পারছেন সাধ্যমতো করছেন। কিন্তু শিশুদের আলাদা করতে প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা।
রাজধানীর একটি হাসপাতালের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট নূসরাত আরা জানান, গর্ভে জাইগোটের বিভাজনের সময়ের ওপর নির্ভর করে জোড়া লাগানো যমজ শিশুর জন্ম হয়ে থাকে। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা পেলে এই শিশুদের আলাদা করা সম্ভব।
সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাডিয়াট্রিক সার্জন এম এ মুমিন রাসেল জানান, বুক জোড়া লাগানো থাকায় চিকিৎসকদের ধারণা, হয়তো তাদের হৃদপিণ্ড একটি। এ ক্ষেত্রে দুজনের বাঁচার সম্ভাবনা কম। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে চূড়ান্তভাবে কিছুই বলা সম্ভব নয়।
এম এ মুমিন রাসেল আরো বলেন, এই শিশুদের উন্নত পরীক্ষা করতে হবে। তাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ (অর্গান) যদি আলাদা থাকে, তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুটিকে আলাদা করা সম্ভব হবে। এ ধরনের অস্ত্রোপচার অনেক ব্যয়বহুল। শিশুদের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল। এ ক্ষেত্রে তাদের সরকারিভাবে ঢাকা শিশু হাসপাতাল অথবা বিএসএমএমইউতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে হবে। এ ধরনের জোড়া শিশুর চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিভিন্ন দাতা সংস্থাও সহযোগিতা করে থাকে।