রাজশাহীতে ‘বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি’
যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে রাজশাহীতে প্রায় ৩২ একর জায়গায় স্থাপন করা হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি’। নগরীর রাজপাড়া থানার পদ্মা নদীসংলগ্ন নবীনগর এলাকায় আজ শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির সড়কবাতি স্থাপন, ভূমি উন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজশাহীতে ৩১ দশমিক ৬৩ একর জায়গায় বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৪৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। নির্মাণ শেষে এখানে ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরসহ সারা দেশে ২৮টি হাইকেট পার্ক নির্মাণ করা হবে, যার নির্মাণকাজ শুরু হলো রাজশাহী থেকে। এই সিলিকন সিটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে। রাজশাহী থেকেই তৈরি হবে ফেসবুক ও গুগল।
জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগর সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও হাইটেক পার্ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০১১ সালে রাজশাহীতে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাইটেক পার্ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলেন তৎকালীন সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তাঁর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে হাইটেক পার্ক স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কাজ আজ শুরু হলো।
সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীতে প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। কিন্তু তাদের কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ রাজশাহীতে নেই। বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি স্থাপনের পর শিক্ষার্থীরা এখানে কাজের সুযোগ পাবে। তাদের কোনো বিনিয়োগ করতে হবে না। মেধা দিয়ে তারা স্বাবলম্বী হবে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ ছেলেমেয়ে এখান থেকে উপকৃত হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও হাইটেক পার্ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, বিওবি অর্থায়নে সিলিকন সিটিতে দশতলাবিশিষ্ট একটি এমটিবি ভবন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ভূমি উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ সড়ক, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ইনকিউবেশন সুবিধা সৃষ্টি করা হবে বিওবি অর্থায়নে। আর বিশ্বব্যাংকের ঋণের ৪৩ কোট ১৯ লাখ টাকা অভ্যন্তরীণ সড়ক ও ভূমি উন্নয়নসহ কিছু সহায়ক অবকাঠামো এবং ৬২ হাজার বর্গফটু আয়তনের পাঁচতলাবিশিষ্ট একটি আইটি ইনকিউবেটর কাম ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হবে।
আগামী তিন বছরের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে জানিয়ে হোসনে আরা বেগম বলেন, সিলিকন সিটিতে প্রশিক্ষণ ও কর্মস্থান দুটোই দেওয়া হবে। প্রথমে প্রশিক্ষণ ও পরে কাজ দেওয়া হবে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটি) পারভেজ রায়হান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে রাজশাহীতে নির্মিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি’। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিকো এবং সান হোসে শহরের মাঝামাঝিতে ৩০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা সিলিকন ভ্যালি ইন্টারনেট সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু, অ্যাপল, ইনটেল, এএমডি, এইচপি, ওরাকল, অ্যাডবির মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয় এই সিলিকন ভ্যালিতেই। এ ছাড়া সেখানে রয়েছে কয়েকশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিলিকন সিটির আদলেই নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি। নির্মাণকাজ শেষ হলে এখানে ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান হবে।
গত ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার নবীনগর মৌজায় গড়ে তোলা হচ্ছে এই সিলিকন সিটি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগর কমিটির সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে তথ্যপ্রযুক্তি অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। আমরা প্রত্যাশা করি, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ফেসবুক, গুগল, হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্রতিষ্ঠান বা সেবা রাজশাহীতে তৈরি হবে। তৈরি হবে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ বিপুল জনশক্তি।’
লিটন আরো জানান, সিটি মেয়র থাকা অবস্থায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজশাহীতে হাইটেক পার্ক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে যার নাম দেওয়া হয় বরেন্দ্র সিলিকন সিটি। রাজশাহী তথা এ অঞ্চলের মানুষের তথ্যপ্রযুক্তির এ স্বপ্ন এবার বাস্তবায়ন হতে চলেছে। এ জন্য রাজশাহীর মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে বলে জানান লিটন।