ক্র্যাশ ডায়েট কতটুকু স্বাস্থ্যকর?
ক্র্যাশ ডায়েট (CRASH DIET) অনেকের কাছে স্বাস্থ্যকর ডায়েটের চেয়েও অনেক পছন্দনীয় ও আকর্ষণীয়। কী এই ক্র্যাশ ডায়েট? অনেকে জেনে বা না জেনে অনেক ধরনের ক্র্যাশ ডায়েট করে থাকেন। কেউ কেউ কোনো খাবার বাদ দিয়ে বা একেবারে না খেয়ে ক্র্যাশ ডায়েট করেন।
আবার অন্যদিকে কেউ কেউ স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি বেশি খেয়ে বাকি সব খাবার বাদ দিয়েও ক্র্যাশ ডায়েটিং করেন। যেমন, দৈনিক মেন্যু থেকে কার্বোহাইড্রেটকে একেবারে বাদ দিয়ে ক্র্যাশ ডায়েট করা,অতিরিক্ত প্রোটিন খেয়ে ক্র্যাশ ডায়েট করা, শুধু শশা আর গ্রিন টি খেয়ে ক্র্যাশ ডায়েট করা, খাবার থেকে তেল বাদ দিয়ে শুধু সিদ্ধ খাবার খাওয়া, মুঠো মুঠো বাদাম খেয়ে ক্র্যাশ ডায়েট করা, এক দিন ফল, একদিন দুধ, একদিন সবজি বা মাংস খেয়ে ক্র্যাশ ডায়েট করা ইত্যাদি।
এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার আগে একবারও কি নিজের শরীরের কথা ভেবেছেন? যখন কার্বোহাইড্রেট বাদ দিচ্ছেন অর্থাৎ ভাত বা রুটি কিছুই খাচ্ছেন না তখন লিভারের কথা একবার ভেবেছেন? যাকে কার্বোহাইড্রেটের অভাবে মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ সরবরাহ করতে করতে দুর্বল হয়ে পড়তে হচ্ছে, আবার অপর দিকে অতিরিক্ত প্রোটিন খেয়ে ক্র্যাশ ডায়েটিংয়ে কি পরিমাণ খাটাচ্ছেন আপনার কিডনিকে একবার ভাবুন! এভাবে খাওয়া কিডনিকে দ্রুত নষ্ট বা দুর্বল করার জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে অতিরিক্ত বাদাম খেয়ে ওজন কমাতে গিয়েও কিন্তু কিডনিকে চাপে রাখছেন। খিদে পেলেই শশা খেয়ে, আবার কেউ কেউ শুধু শশা খেয়েই ডায়েট করে দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা ঘটাচ্ছেন। লেবু আর মধুকে অনেকে খাচ্ছেন পানির মতো। দৈনিক ভিটামিন সির চাহিদার কোনো তোয়াক্কা না করেই খেয়ে যাচ্ছেন প্রচুর লেবু। একবার ভেবেছেন এই অতিরিক্ত ভিটামিন শরীরে গিয়ে কী করতে পারে? ভুলের কোনো শেষ নেই।
একটা কথা মনে রাখবেন, যত দ্রুত আপনি ওজন কমাবেন, আপনার শরীরের বিপাক তত ধীর হতে থাকবে, এতে ডায়েট ছেড়ে দিলে আগের চেয়ে আরো বেশি স্থূল হবেন। কমবেন তো নাই বরং শরীরের কিছু ক্ষতি হবে মাঝখান থেকে। পুষ্টি ঘাটতি এর জন্য যে ক্ষতি হবে তার লক্ষণ সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় না। লক্ষণ বেশ অনেকদিন পর বুঝতে পারবেন। তাই আজ থেকে আর ক্র্যাশ ডায়েট নয়। শরীরের সঙ্গে যুদ্ধ নয়,বন্ধুত্ব তৈরি করুন। ওজন কমাতে সঠিক, স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলুন।
লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল