আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী
তিনদিন ধরে চলা আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন ১৪২৪ শেষ হলো গতকাল সোমবার। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি আনুষ্ঠানিকভাবে এ মিলন মেলার সমাপনী ঘোষণা দেন। রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন পরিষদের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনের।
আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী দিনের আয়োজন শুরু হয় সকাল ১০টায়। প্রথম পর্বে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত 'ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি জাতিসত্তা' নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, আলোচনায় অংশ নেয় উষারঞ্জন ভট্টাচার্য, আবুল মোমেন,স্বপ্নময় চক্রবর্তী, অমর মিত্র, গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
অনেক আকাশ মঞ্চে সকাল ১১ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত 'সাহিত্যের চলচ্চিত্রায়ন'-এর ওপর কথাপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন ফৌজিয়া খান, বিধান রিবেরু, উদিসা ইসলাম ও শোয়েব সর্বনাম। সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন মাসুদ পথিক।
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত 'প্রযুক্তি বিশ্বে বাংলা সাহিত্যের সংকট ও সম্ভাবনা' নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজু আলাউদ্দীন। আলোচনায় অংশ নেয় মোস্তাফা জব্বার, প্রবীর শীল, শ্যামল কান্তি দাশ। সভাপতিত্ব করেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
কবি শামসুর রাহমান মিলানায়তনে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ' সাহিত্যের অনুবাদ, অনুবাদের সাহিত্য' নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করার কথা ছিলো অধ্যাপক আবদুস সেলিমের, কিন্তু তিনি দেশে না থাকায় প্রবন্ধ পাঠ আর হয়নি। তবে আলোচনা হয়, এতে অংশ নেন মনোজ মিত্র, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, মৃদুল দাশগুপ্ত, জি এইচ হাবীব, ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর।
বেলা আড়াইটায় নজরুল মঞ্চে প্রাক সমাপনী অনুষ্ঠান রূপচান সুন্দরীর পালা গান অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। সমাপনী ভাষণে প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘পরিবেশ দূষণের থেকে বড় দূষণ মানুষের মনে। এই দূষণ জাতিসংঘ দূর করতে পারবে না। এই দূষণ দূর করতে পারেন শিল্পী-সাহিত্যিকরা। লেখকদের উদ্দেশে প্রণব মুখার্জি আরো বলেন, ‘আসুন এই সংকল্প করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা হিংস্রতার সব বিষবাষ্প থেকে বাঁচাব, এই হোক আজকের অঙ্গীকার।’
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সমাপনী আসরে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ভারতের চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও ভারতের সংসদ বিষয়কমন্ত্রী সরযূ রাই।
সম্মেলনের আহ্বায়ক ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘এ সম্মেলন সামনের দিনগুলোতে শুধু বাঙালিত্বের গৌরবকেই স্মরণ করবে না, বরং সামনে এগিয়ে যাবার নির্দেশনা খুঁজে নেবে।’ এরপর ‘ঢাকা ঘোষণা’ পাঠ করেন সম্মেলন আয়োজক পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া শিল্পী বুলবুল মহলানবিশ আয়োজন সম্পর্কে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, 'আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন হচ্ছে আমি খুবই আনন্দিত। এ উৎসব দুই বাংলার সাহিত্যকে মিলাবে এক সুতোয়। দুই বাংলার তিন শতাধিক সাহিত্যিক অংশগ্রহণ করেছে, সবার সাথে ভাব বিনিময় হচ্ছে, সাহিত্যিকদের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবারের আয়োজনে আয়োজকদের কিছু ভুল ছিল। পরবর্তী আয়োজনে আয়োজকরা বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন এবং প্রতি বছর এ উৎসবের আয়োজন করবেন বলে আশা করি।’
সবশেষে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার রবীন্দ্রসংগীতের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ১৪২৪-এর সমাপনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।