দেশি মোটরসাইকেলের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে
বাণিজ্য মেলায় মোটরসাইকেল কিনতে এসেছেন সাজিদ রহমান। তিনি পেশায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। ‘গত বছর অনেক কম দামে এবং দেশীয় ব্র্যান্ডের নতুন মডেলের মোটরসাইকেল মেলায় ছিল।তখন কেনা হয়নি। তাই এবার এলাম। আমার পছন্দ রানারের মোটরসাইকেল। পছন্দ এবং দামে হয়ে গেলে আজই কিনব।’ এনটিভি অনলাইনকে জানালেন সাজিদ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে প্রতিবছরই নতুন ডিজাইন ও মডেলের মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। এবং বিশাল অঙ্কের ছাড়ের সুযোগও থাকে এই মেলায়। এবারও দেশীয় মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রানার, ওয়ালটন ও যমুনা অটোমোবাইল লিমিটেড নতুন ব্র্যান্ডের সব মোটরসাইকেলে মূল্যছাড় দিচ্ছে। দামে কম আর মান ভালো হওয়ায় এসব দেশীয় পণ্যের প্রতি ক্রেতারা আকৃষ্ট হচ্ছেন বলেও জানান বিক্রেতারা। এ ছাড়া ভারতের মাহিন্দ্রা কোম্পানির মোটরসাইকেলের স্টলও রয়েছে মেলায়। আফতাব অটোমোবাইলস বাংলাদেশে মাহিন্দ্রা কোম্পানি বাজারজাত করেছে।
নতুন মোটরসাইকেলের নাম বাংলায়
মেলা উপলক্ষে বাংলা নাম দিয়ে নতুন তিনটি মোটরসাইকেল এনেছে ২৪ নম্বর প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নের রানার প্রতিষ্ঠানটি। দুরন্ত ৮০ সিসি মডেলের মোটরসাইকেলের দাম রাখা হয়েছে ৫১ হাজার টাকা। বিজয় ১০০ সিসির দাম রাখা হয়েছে ৬৮ হাজার টাকা এবং চিতা ১০০ সিসির দাম ধরা হয়েছে ৭২ হাজার টাকা। বুলেট ১০০ সিসির নতুন ভার্সনও পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। এ ছাড়া মেলায় ছিল আরো ১৫টি মডেল। কিন্তু জায়গার স্বল্পতার জন্য মাত্র ১২টি মডেল ডিসপ্লে করা হয়েছে।
রানারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আলেক খন্দকার এনটিভিকে বলেন, ‘এবারের মেলায় প্রতিটি মোটরসাইকেলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। এ ছাড়া ইনস্টলমেন্টেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিতে হবে। যদি ইনস্টলমেন্টের টাকা তিন মাসের মধ্যে শোধ করা হয়, তাহলে কোনো বাড়তি টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর তিন মাসের বেশি সময় লাগলে সে ক্ষেত্রে বাকি অর্থের ওপর আড়াই শতাংশ বাড়তি টাকা দিতে হবে।’
তবে মেলায় শুধু মোটরসাইকেলের বুকিং নেওয়া হচ্ছে। কিনতে হলে রানারের কর্মকর্তারাই শোরুমে কেনার ব্যবস্থা করে দেবেন। ইনস্টলমেন্টের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। এ ছাড়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডহোল্ডাররা সাত হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় পাবেন।
এ ছাড়া রানার টারবো-১৫০ সিসি নামে আরও একটি সুদৃশ্য ব্র্যান্ডের গাড়িও মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে। এর দাম এক লাখ ৪২ হাজার টাকা।
খরচ কম সিসি বেশি
মেলা উপলক্ষে ৮ নম্বর প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে নতুন মডেলের মোটরসাইকেলও এনেছে ওয়ালটন। খরচ কম, সিসি বেশি এবং তেলও কম লাগে ওয়ালটনের এই মোটরসাইকেলে, এমনটাই দাবি করছিলেন বিক্রেতারা।
ওয়ালটনের ম্যানেজার মোহাম্মদ একরামুজ্জামান অপু এনটিভিকে জানান, মূলত নতুন পণ্যের প্রদর্শনীর জন্য মেলায় আসা। মেলা উপলক্ষে প্রায় সব মোটরসাইকেলেই ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যছাড় দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ওয়ালটনের কয়েকটি ব্র্যান্ডের মধ্যে ফিউশন-১১০ সিসি ও ফিউশন-১২৫ সিসি মোটরসাইকেল মেলায় আনা হয়েছে। এবং এই ব্র্যান্ডগুলো এবারের মেলায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া রেঞ্জার ও লিও ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল দুটিও ক্রেতারা পছন্দ করছেন।
চুরি রোধে নতুন প্রযুক্তি
ভারতের গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মাহিন্দ্রা মেলা উপলক্ষে চারটি মোটরসাইকেল ও দুটি স্কুটি এনেছে। তবে মেলায় এবার মাহিন্দ্রার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো সেন্টুরো মোটরসাইকেল। চুরি প্রতিরোধে ১০০ সিসির এই মোটরসাইকেল বেশ নিরাপদ। এ প্রসঙ্গে মাহিন্দ্রা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা আতিকুর রহমান এনটিভিকে বলেন, ‘গাড়িটি চুরি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, এটি চুরি করতে হলে আগে চাবি চুরি করতে হবে। অ্যান্টিথিফ লক সিস্টেম রয়েছে এতে। বিশেষ ধরনের ডিভাইস দিয়ে ইঞ্জিনের সঙ্গে চাবির পাসওয়ার্ড ম্যাচ করা হয়েছে। অন্য কোনো উপায়ে মোটরসাইকেলটি স্টার্ট করা অসম্ভব।’
১০০ সিসির মোটরসাইকেলটির ফুয়েল ট্যাঙ্ক ক্যাপাসিটি ১২ দশমিক ৭ লিটার। এর দাম ধরা হয়েছে এক লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। মেলা উপলক্ষে ছাড় দেওয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা।
এ ছাড়া পুরোনো ডিজাইনের ওপর নতুন চমকের মাহিন্দ্রার অ্যারো মোটরসাইকেলটিও মেলায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যার দাম এক লাখ পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা।
নতুন এসেই নজর কেড়েছে
যমুনা অটোমোবাইল লিমিটেড বাজারে একেবারে নতুন। এবারের মেলায় ৫৬ নম্বর প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নে যমুনা মোটরসাইকেলের চারটি নতুন মডেল এনেছে। জিউস ১৫০ সিসি—দাম এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ফেবিও ১৫০ সিসি—দাম এক লাখ ১০ হাজার টাকা, ভিক্টরি ১০০ সিসি—দাম ৮০ হাজার টাকা এবং ভিক্টরি ৮০ সিসি—দাম ৭৫ হাজার টাকা। তবে নতুন হলেও জনপ্রিয়তায় যমুনা অন্য মোটরসাইকেল প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে কোনো অংশে কম নয়।
অতএব, যাঁরা এ বছর মোটরসাইকেল কিনবেন বলে ভাবছেন, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলার বিশেষ ছাড়ের সুযোগ নিতে পারলে মন্দ কী!