সিজোফ্রেনিয়া : প্রয়োজন বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা
সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ। অনেক সময় রোগীরা সঠিক চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে অপচিকিৎসকের কাছে চলে যান। আর এতে আরো বিপত্তি ঘটে।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০১৬তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে যখন রোগী আসে, তখন কোন অবস্থায় আসে? কী বলে লোকজন তখন?
উত্তর : বইপত্রের কথা অনুযায়ী ৯৭ ভাগ রোগী মনে করে না যে আমার কোনো রোগ রয়েছে। যারা রোগকে রোগ মনে করে না, তারা কিন্তু চিকিৎসার জন্য আসবে না। এটিই স্বাভাবিক। এই যে রোগী নিজেকে অসুস্থ মনে করে না, এ জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা নিজেরা আসে না।
তবে কোনো কোনো শিক্ষিত রোগী, মেধাবী রোগী, তারা কিন্তু চলে আসে। বলে, ‘আমার কিন্তু এ রকম হচ্ছে।’ তখন এটি পাওয়া যায়।
আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিভাবকরা নিয়ে আসে। দেখা যায়, তার বেশিরভাগ কাজ ঠিকমতো করছে না। পারিবারিক কাজ, পেশাগত কাজ বা স্কুল-কলেজ, যে যে কাজ করে সেখানে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়া শুরু করে। ভাবছে, গায়েবি আওয়াজ শুনছে, কাজের ক্ষেত্রে কাউকে অহেতুক সন্দেহ করছে, ভাবছে আমার কাজকে ধ্বংস করে ফেলবে। তখনো মানুষের আসলে সতর্ক হওয়া উচিত। সতর্ক হবে আরো সহজে, যখন আমরা একজন মানুষকে আমি যেভাবে চিনি, তার বাইরে কোনো কিছু চিন্তাভাব্না করা শুরু করল, তখন কিন্তু সতর্ক হওয়া উচিত। সব সময় যে সিজোফ্রেনিয়া হবে তা নয়; নাও হতে পারে।
যখন রোগ অনেক দূর চলে যায়, তখন কিন্তু চিকিৎসাও কঠিন হয়ে যায়। প্রথমে যদি বুঝতে পারা যায়, তাহলে চিকিৎসা ভালোভাবে দেওয়া সম্ভব। এই জন্য দেখা যায়, অভিভাবকরাই বেশির ভাগ সময় নিয়ে আসে। তবে দেখা যায়, নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থাকলে নিয়ে আসে। তবে এটা না করে যদি প্রথমে বোঝা যায় যে কেন এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে কিন্তু চিকিৎসা সহজ।
প্রশ্ন : এ ধরনের সমস্যায় অনেকেই অপচিকিৎসকের কাছে চলে যায়। এ ধরনের সমস্যায় কী ধরনের পরামর্শ দেবেন?
উত্তর : শুধু যে গরিব বলে বা অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না বলে এমন করে তা নয়, আমাদেরও দোষ রয়েছে। পর্যাপ্ত লোকবল আমাদের এখন পর্যন্ত তৈরি নয়। গ্রামে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা করার মতো কিন্তু এখনো কেউ নেই। এর পেছনে অনেক বিষয় রয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল নেই বলে কিন্তু তাদের কোথাও না কোথাও ভরসা করতে হয়। যেহেতু পরিবারে সে ঠিকমতো কাজগুলো করতে পারে না, অন্যান্য সম্পর্ক ঠিকমতো ব্যবস্থাপনা করতে পারে না, তখন তাদের বাধ্য হয়ে কোনো না কোনো কিছু করতে হয়। এর কারণে শেষ পর্যন্ত অপচিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিজোফ্রেনিয়া হলো একটি ক্রনিক রোগ। অনেক সময় চিকিৎসা করতে গিয়েও তারা হাঁপিয়ে যায় যে আমরা কত করব। এটাও কিন্তু সত্য কথা।
আমরা যারা চিকিৎসা করি, আমাদের নীতির মধ্যেও কিছু বিষয় থাকা উচিত। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চিকিৎসকের কাছে গেলে ঘুমের ওষুধ দিয়ে আসে বা একবার ওষুধ খাওয়া শুরু করলে আর ছাড়া যায় না।
যেহেতু এই রোগ এই লম্বা সময়ের রোগ, সে ক্ষেত্রে কিন্তু চিকিৎসক ছাড়া তাদেরও কিছু করার থাকে না। আমাদের করা উচিত সবভাবেই। আমাদের চিকিৎসা যেমন দেওয়া উচিত, একই সঙ্গে পলিসি লেভেলে পরিবর্তন করা উচিত। কারণ, এটা যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি রোগ, সারা জীবন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হতে পারে, তাহলে সেটি কীভাবে তারা চালিয়ে যেতে পারে, সে সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করা যায় কি না দেখতে হবে। সেটাও কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তখন হয়তো অপচিকিৎসকের জায়গাটা বাদ দিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা নিতে পারবে। বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
ছবি : সংগৃহীত