কেন অল্প খাবার বারবার
সকালে উঠইে হয়তো না খেয়ে কাজে বেরিয়ে পড়লেন। দুপুরের খাবার খেতেও বেলা গড়িয়ে যায়। আর সকালে খাওয়া হয়নি বলেএকগাদা খেয়ে ফেললেন পড়ন্ত বেলায়। এভাবে শরীরে খাবারের পরিমিতি রক্ষা হয় না। পুষ্টিবিদদের মতে, বারবার অল্প খাবার খাওয়াটা শরীরের জন্য জরুরি। আর এটি অনেক রোগ থেকেও মুক্ত রাখতে পারে আপনাকে।
সুস্থ থাকতে হলে
সুস্থ থাকার জন্য বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অল্প খাবার বারবার খেলে অনেক সুস্থ এবং রোগমুক্ত থাকা সম্ভব। এটি শরীরের পরিপাকক্রিয়াকে সক্রিয় ও সচল রাখে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। কেননা অনেক রোগের মূল কারণ মাত্রাতিরিক্ত ওজন। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে ২৪ ঘণ্টার খাবারকে ভাগে ভাগে খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র বিপাকের ক্ষেত্রে নয়, এসিডিটি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও অল্প খাবার বারবার খাওয়া কার্যকর। এর ফলে শরীরের পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ সঠিকভাবে হয়। এতে খাবারের ভাগ যেমন রক্ষা করা সহজ, তেমনি বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ গ্রহণ করাও সম্ভব।
আর সুষম খাবার শরীরের জন্য সব সময়ই উপকারী। তাই সুষম খাবার গ্রহণ করা জরুরি। সুষম খাবারের প্রথম শর্ত, মডারেশন বা সঠিক পরিমাণ, দ্বিতীয়টি ভেরিয়েশন বা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ এবং তৃতীয়টি পুষ্টিকর খাবার বারবার গ্রহণ। তাই এভাবে শরীরের ওজনও কমানো সম্ভব।
দীর্ঘ সময় না খেলে কী হয়
অনেকের ধারণা, সারা দিনে দুই থেকে তিনবার খেলে শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকক্ষণ না খাওয়ার ফলে শরীর এক ধরনের অবস্থায় চলে যায়, একে বলা হয় স্টারভেশন মুড। ফলে শরীর ক্যালরি ধরে রাখে। এতে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যায়। শরীরের ইনসুলিনকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে অল্প খাবার বারবার খাওয়া সাহায্য করে। এতে শরীরের ব্লাড সুগার সুন্দরভাবে কাজ করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও অল্প খাবার বারবার খাওয়া উপকারী। এ ছাড়া অল্প খাবার বারবার খেলে মানসিক তৃপ্তি ও শান্তি পাওয়া যায়। কেননা অনেকেই খাবার খেতে ভালোবাসেন। তাই একটি খাবার খাওয়ার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে যখন আরেকটি খাবার খাবেন, তখন আত্মতৃপ্তি বা আনন্দ অনুভব করবেন। এতে একসঙ্গে অনেক বেশি খাওয়ার প্রবণতাও কমে যায়।
দিনে কয়বার খাবেন
সাধারণত দিনের খাবারকে ছয় ভাগে ভাগ করলে উপকার বেশি হয়। যদিও অনেক গবেষণায় এটিকে আট ভাগে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে। তবে দিনে ছয়বার খাবার খাওয়াই সর্বাধিক স্বীকৃত। এ ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধানও ভালো করে মেনে চলতে হব। যেমন- সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে সকালের নাশতা। ১০টা ৩০ থেকে ১১টার মধ্যে সকালের হালকা খাবার। দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে দুপুরের খাবার। বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে বিকেলের হালকা খাবার। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে রাতের খাবার। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় আরেকটি হালকা খাবার।
তবে অল্প খাবার বারবার খেয়ে শরীর সুস্থ রাখার মানে এই নয়, যেকোনো কিছুই খাওয়া যাবে ইচ্ছেমতো। হালকা নাশতায় থাকতে পারে বাদাম, টকমিষ্টি মৌসুমি ফল, টকদই, ছানা, খেজুর, শস, লেবুর পানি, ডাবের পানি, অধিক আঁশযুক্ত ক্রিম ছাড়া বিস্কুট ইত্যাদি।
কী খেতে পারেন
এখানে রাত, দুপুর ও সকালের খাবারকে প্রধান ধরা হয়। সকালের নাশতা হবে খুবই ভালো। দুপুরে এবং রাতের খাবার মাঝারি হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভাত, রুটি, ডাল, মুরগির মাংস, মাছ, ডিমের সাদা অংশ, শাকসবজি, সালাদ, নুডলস এগুলো থেকে আপনার প্রধান খাবারটি বেছে নিতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে আপনার খাবারের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন। এটি অবশ্য নির্ভর করবে আপনার দৈনন্দিন ক্যালরি চাহিদার ওপর। যেমন একজন শ্রমিকের ক্যালরির চাহিদা একজন কেরানির চেয়ে বেশি হবে। কাজেই শ্রম ও শরীরের চাহিদা বুঝেই পরিমাণমতো গ্রহণ করতে হবে খাবার।
তামান্না চৌধুরী : পুষ্টিবিদ, এ্যাপোলো হাসপাতাল