উচ্চ মাধ্যমিকের ১৭ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেবে সরকার
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরেপড়া বন্ধে ১৭ লাখ তিন হাজার দরিদ্র শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেবে। মোট ছাত্রীর ৪০ ভাগ, আর ছাত্রের ১০ ভাগকে এ উপবৃত্তির আওতায় আনা হবে। বিজ্ঞান বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগে দুই ক্যাটাগরিতে এই উপবৃত্তি দেওয়া হবে।
শেরে বাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনের (এনইসিসি) সম্মেলন কক্ষে আজ সকালে একনেকের সভায় উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে ‘উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তি প্রকল্প’ অনুমোদন দেওয়া হয়। একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই সভায় এক হাজার ৩৪৭ কোটি টাকার মোট ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এর পুরোটাই ব্যয় করা হবে সরকারি তহবিল থেকে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে পাঁচটি নতুন এবং একটি সংশোধিত।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানিয়েছে, আজকের একনেকের বৈঠকে মোট ১৭ লাখ তিন হাজার শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির আওতায় কিভাবে আনা হবে, সে বিষয়টি সরকার স্পষ্ট করেছে। সরকার আশা করছে এর ফলে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধ হবে। সেই সাথে বিজ্ঞান শিক্ষায়ও উৎসাহ বাড়বে। সভায় এ কার্যক্রম সম্পূর্ণ করতেই ‘উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তি প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৫১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন মাস মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিজ্ঞান বিভাগে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী মাসিক বৃত্তি হিসেবে ১৭৫ টাকা ও টিউশন ফি ৫০ টাকা পাবে। সেইসাথে বই কেনা ও পরীক্ষা ফি বাবদ এককালীন এক হাজার ৬০০ টাকা পাবে। অন্যান্য বিভাগ থেকে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী মাসে ১২৫ টাকা বৃত্তি ও ৫০ টাকা টিউশন ফি পাবে। এছাড়া বই ও পরীক্ষা ফি বাবদ একত্রে এক হাজার ২০০ টাকা পাবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরো জানান, উপবৃত্তি সংক্রান্ত প্রকল্প ছাড়াও আরো পাঁচটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মাধ্যমিক, একটি উচ্চ মাধ্যমিক ও একটি স্নাতক পর্যায়ে চলমান রয়েছে। যেসব এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থী এখনো উপবৃত্তির আওতায় আসেনি তাদেরও পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রমের আওতায় আনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো শিক্ষা। এ ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়কে আমরা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ হিসেবেই দেখছি।’ সরকারি বিদ্যালয়বিহীন ৩১৫টি উপজেলা সদরে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে বাছাই করে একটিকে সরকারি মডেল বিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হবে। এ জন্য এ সংক্রান্ত একটি সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক সভা। ২০০৯ সাল থেকে প্রকল্পটির কাজ চলমান। সভায় প্রকল্পটির সমাপ্তিকাল ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে প্রকল্পটির ব্যয় ৯২ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫৫৮ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়। মূলত, পাঁচটি উপজেলায় নতুন করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তি, ২৯টি বিদ্যমান ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও ৩১৫টি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান গবেষণাগারসহ মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ নির্মাণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৫৫৮ কোটি ব্যয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সভায় জানানো হয়, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৬৮ ভাগে দাঁড়িয়েছে।
সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল কম্পাউন্ডের নির্মাণাধীন ‘৭ মার্চ ভবনকে’ ১১তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এ ছাত্রী হলে নতুন করে ৫০০ নারী শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলান হবে। বর্তমানে ভবনটির কাজ ৬তলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে।
সভায় ‘পাকুয়া-দেলদুয়ার-এলাসিন সড়কের ১২তম কিলোমিটারে এলেনজানী নদীর ওপর ৯৩.০২ মিটার নাল্লাপাড়া পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ এবং বালিয়া-ওয়ার্শি-মির্জাপুর সড়কে দুটি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ,’ ‘রংপুরে এস্টাব্লিসমেন্ট অব রুরাল ডেভেলপমেন্ট একাডেমি’, ‘নীলফামারী ও নেত্রকোনায় জেলা স্টেডিয়ামের উন্নয়ন এবং রংপুর মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ’ শীর্ষক অপর তিনটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বরাদ্দকৃত অর্থের যে অংশ নির্দিষ্ট সময়ে ব্যয় করতে পারবে না বলে মন্ত্রণালয়গুলো মনে করছে এখনই তা জানিয়ে দিলে সে অংশ অন্যত্র বরাদ্দ দেবে পরিকল্পনা কমিশন। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপির বাস্তবায়নের হার ৩২ ভাগ এবং ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ে এ হার ছিল ৩১ ভাগ এবং ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা।