আশরাফুলের স্মৃতিতে বিশ্বকাপ
২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১ টানা তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন মোহাম্মদ আশারাফুল। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবার দর্শক। নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত। কিন্তু ক্রিকেট যাঁর রক্তে তিনি কী আর ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে পারেন! অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ যখন একেবারে দোরগোড়ায়, ঠিক তখন আশরাফুলকে নাড়া দিচ্ছে বিশ্বকাপ ঘিরে অনেক স্মৃতি।
আজ হয়তো তিনি বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় থাকতেন। হতে পারতেন বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁকে ছিটকে দিয়েছে ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে। তবে দেশে থেকেই বাংলাদেশ দলের সাফল্য কামনা করছেন, প্রার্থনা করছেন সাকিব-মাশরাফিরা যেন দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারেন।
এরই মাঝে আশরাফুলের মনে ভিড় করছে বিশ্বকাপের স্মৃতি। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে গত তিনটি বিশ্বকাপের সুখ-দুঃখের স্মৃতি। মনে পড়ছে ২০০৭ বিশ্বকাপে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসটির কথা।
আশরাফুলের সেই ইনিংস আজও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস। ওই ইনিংসটিকে ওয়ানডে-ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস বলতেও দ্বিধা নেই তাঁর। ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ একটি সেঞ্চুরি আছে আশরাফুলের। তারপরও এটিই তাঁর কাছে সেরা।
কারণ একটাই—বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ বলেই আশরাফুল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৭ রানের ইনিংসটিকে এগিয়ে রাখছেন। তাঁর মতে, ‘বিশ্বকাপের মতো আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেতা সত্যিই অসাধারণ ব্যাপার। র্যাংকিংয়ে তখনকার এক নম্বর দলকে হারিয়ে প্রমাণ করেছিলাম ভালো কিছু করার ক্ষমতা আমাদেরও আছে। আর সে কারণে ওয়ানডেতে এটিই আমার কাছে সেরা।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা ইনিংসের পেছনে সতীর্থ মুশফিকুর রহিমের অবদানের কথাও জানালেন আশরাফুল, ‘তখন আমি ৪৭ রান নিয়ে ব্যাট করছিলাম। একটি সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যেতে বসেছিলাম। কিন্তু মুশফিক নিজেই আউট হয়ে আমার জন্য স্যাক্রিফাইস করেছিল। নইলে ওই ইনিংসটি খেলা সম্ভব হতো না।’
আট বছর ধরে আশরাফুলের এই ‘রেকর্ড’ অক্ষত। তবে তাঁর বিশ্বাস, এবার বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান শতকের দেখা পাবেন, ‘বিশ্বকাপে এখনো বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার সেঞ্চুরি করতে পারেননি। আমি চাই আমার এই রেকর্ড ভেঙে এবার কেউ সেঞ্চুরি করুক। আমার বিশ্বাস এবার কেউ না কেউ পারবে।’
তবে বিশ্বকাপে আশরাফুলের সবচেয়ে সুখকর স্মৃতি অন্য একটি ম্যাচকে ঘিরে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয় আজও তাঁকে নাড়া দেয়, ‘সেই বিশ্বকাপে সেটাই ছিল আমাদের প্রথম ম্যাচ। ওই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। যদিও সেই ম্যাচে আমার অবদান ছিল অপরাজিত আট রান। ভারতের পর আমরা বারমুডা আর দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারিয়েছিলাম।’
বিশ্বকাপে আশরাফুলের সবচেয়ে দুঃখের স্মৃতিও ২০০৭ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের কাছে ৭৪ রানের হার আজও তাড়া করে তাঁকে। ২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডা আর কেনিয়ার কাছে পরাজয়ও পীড়া দেয়।
বিশ্বকাপের স্মৃতির ভিড়েও লক্ষ্যের প্রতি অবিচল আশরাফুল। তাঁর মন-প্রাণজুড়ে বিরাজ করছে ক্রিকেটে ফেরার ব্যাকুলতা। গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠে কোচ সারোয়ার ইমরানের অধীনে ব্যাট-বল নিয়ে অনুশীলন করছেন তিনি। সপ্তাহে তিনদিনের অনুশীলনে আশরাফুলের সঙ্গী বিসিবি একাডেমির খুদে ক্রিকেটাররা।