‘স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক নিষ্ঠুরতা নয়’
অন্য নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ককে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর নিষ্ঠুরতা বলে গণ্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। এমনকি এটিকে স্ত্রীর আত্মহত্যার কারণ হিসেবেও ধরা হবে না বলে জানানো হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গুজরাটের এক স্ত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার পর এমন আদেশ দেন আদালত। সেখানে এক দম্পতির মধ্যে নামেমাত্র সম্পর্ক ছিল এবং তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদের চিন্তা করছিলেন। স্ত্রী সবকিছু তাঁর ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং তাঁর বোনকে বলেছিলেন যে তাঁর বিয়ে ভাঙতে চলেছেন। তিনি তাঁর স্বামীর সংসার ছেড়ে আসার কথাও জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
বিচারে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, স্বামীর অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় এবং স্বামী ও তাঁর মা-বাবার অত্যাচারে ওই নারী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে বিচারিক আদালত এবং উচ্চ আদালতে স্বামীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
আবেদনকারীর আইনজীবী এইচ এ রাইচুড়ার বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি এস জে মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চ বলেন, ‘এ মামলার ক্ষেত্রে যৌতুক দাবির কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদি সাক্ষ্য-প্রমাণগুলো সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে দেখা যাচ্ছে, অন্য নারীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক থাকার যন্ত্রণায় ওই নারী আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় কি ওই ব্যক্তিকে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৪৯৮-এর ‘এ’ ধারায় নিষ্ঠুরতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায়?’
ওই দম্পতি একই বাড়িতে বসবাস করেও যে আলাদা থাকতেন, তা আইনজীবীরা বিচারপতিদের নজরে আনেন। তাঁরা বলেন, ‘যদি অবৈধ সম্পর্কের কোনো প্রমাণ থাকে, যদি বিষয়টি কিছুটা সত্যিও হয়, আমরা যদিএটাকে নিষ্ঠুরতা বলে ধরেও নিই, এবং যদি এটি আইপিসির ধারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে ধরেও নিই, তাহলেও এটা বলা কঠিন যে, মানসিক নিষ্ঠুরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যার কারণে ওই নারী আত্মহত্যা করতে পারেন।’
এই বেঞ্চের রায় লেখার সময় বিচারপতি মিশ্র বলেন, ‘বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক যদি প্রমাণিতও হয়, এটা হয়তো অবৈধ এবং অনৈতিক, কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের এমন কোনো প্রমাণ আনা উচিত ছিল, যেখানে প্রমাণিত হয় যে ওই ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছেন।’
এ মামলায় হয়তো অভিযুক্ত ব্যক্তির অন্য কোনো নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তিনি নিষ্ঠুরভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে তাঁর স্ত্রীকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছেন বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ, কোনো নারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলে আইপিসির ৪৯৮ ধারায় শাস্তি দেওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু এ মামলায় তা কোনোভাবেই প্রমাণ করা যায়নি। তাই সুপ্রিম কোর্টের এই বেঞ্চ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।