চ্যাম্পিয়নখেকো বিশ্বকাপ!
রাশিয়া বিশ্বকাপে চমকের পর চমক। স্বাগতিক রাশিয়ার কাছে স্পেনের বিদায়টা সত্যি চমকে দিয়েছে। অবশ্য গ্রুপ পর্বেই দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিদায়ের পর এটা আর তেমন চমক নয়। বোঝাই যাচ্ছে, রাশিয়া বিশ্বকাপ আসলে অঘটনঘটনপটীয়সী। সামনে নিশ্চয়ই আরো অনেক থ্রিল, আরো নাটক জমে আছে বিশ্বকাপের বুকে।
তবে রাশিয়ার সঙ্গে স্পেনের খেলা দেখে আমার মনে হয়েছে, ফুটবল যে পাসের খেলা নয়, গোলের খেলা; এটা বোধ হয় ইনিয়েস্তারা ভুলে গেছেন। তবে শুধু এই ম্যাচেই নয়, বরাবরই গোল করার ব্যাপারে তাদের অনীহা। তারা মাঠে কাটাকুটি খেলে যেন। এবার তবু গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে ৬ গোল করেছে। ২০১০ সালে তো তারা সাত ম্যাচে ৮ গোল দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছিল। সেবার শেষ তিন ম্যাচ মানে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনালের স্কোরলাইন ছিল একই, ১-০। অথচ দেখুন রাশিয়া প্রথম দুই ম্যাচেই আট গোল করে ফেলেছে। বেলজিয়াম গ্রুপের তিন ম্যাচে করেছে ৯ গোল! গোল করার ক্ষেত্রে কিপ্টেমিই কাল হলো স্পেনের। র্যাংকিংয়ের ১০-এ থাকা স্পেন এবারের অন্যতম ফেভারিটও। আর র্যাংকিংয়ে সবচেয়ে কম, ৭০-এ থাকা রাশিয়ার হারানোর কিছু ছিল না। সেই রাশিয়া এখন সেরা আটে, আর স্পেন ব্যাগ গোছাচ্ছে।
এবারের বিশ্বকাপের প্রথম টাইব্রেকার শুধু ম্যাচের টাইই ব্রেক করেনি, স্প্যানিশদের হার্টও ব্রেক করেছে। ১২০ মিনিটেও রাশিয়ার মতো দলের বিপক্ষে একটির বেশি গোল করতে না পারলে তাদের বাড়ি যাওয়াই ভালো। অথচ ম্যাচের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে স্পেন অনেক পয়েন্ট পাবে। তাদের দখলে বল ছিল ৭৯ ভাগ। স্পেনের খেলার আসল ট্রেডমার্ক তিকিতাকা। পাসের পর পাসের ঢেউ গিয়ে আছড়ে পড়ে প্রতিপক্ষের সীমানায়। কিন্তু গোল আর হয় না। আগের দিন ফ্রান্সের এমবাপে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ফুটবল গতির খেলা, গোলের খেলা। তিন টাচেই যেখানে গোল হয়, সেখানে স্পেন ১০/১৫ পাসের কাটাকুটি খেলে খেই হারিয়ে ফেলে। স্পেন ৯০ শতাংশ একুরেসিতে এক হাজার ১১৪টি পাস দিয়েছে। সেখানে রাশিয়া মাত্র ২৯০টি পাস দিয়েছে, যার ৬৫ ভাগ একুরেট। অথচ ইতিহাসে লেখা থাকবে স্পেন হেরেছে, রাশিয়া জিতেছে।
এখন বিশ্বকাপ খেলে ৩২টি দল। ফিফার র্যাংকিংয়ে আছে দুইশর বেশি দল। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন দল মাত্র আটটি। তাও ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স জেতার আগ পর্যন্ত সংখ্যাটা ছিল ছয়। ২০১০ সালে স্পেন সংখ্যাটাকে আটে উন্নীত করেছিল। সেই স্পেনের পরাজয় নিয়েই এত কথা। কেন যেন আমার এবারের বিশ্বকাপকে চ্যাম্পিয়নখেকো মনে হচ্ছে। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি তো আগেই বাদ। গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়েছে ডিফেন্ডিং জার্মানি। নকআউট পর্বের প্রথম দিনেই বিদায় নিয়েছে পিপলস ফেভারিট আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় দিনে গেল স্পেন। চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে এখনো টিকে আছে ব্রাজিল, উরুগুয়ে, ফ্রান্স আর ইংল্যান্ড। লক্ষণ যা, তাতে সামনে যে কার কপালে কী আছে, কে জানে।
কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রান্স আর উরুগুয়ে। তার মানে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় হচ্ছে আরো এক চ্যাম্পিয়ন। ব্রাজিল আর ইংল্যান্ড তো এখনো নকআউট পর্ব পেরোতে পারেনি। যেভাবে চ্যাম্পিয়নরা একের পর এক ছিটকে যাচ্ছে, তাতে এবার কি নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবে বিশ্বকাপ? পুরোনোদের মধ্যে আমার পছন্দ ব্রাজিল। আর্জেন্টিনাকে চমকে দেওয়া ফ্রান্সের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল। তবে নতুনদের মধ্যে বেলজিয়ামের দারুণ সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। দেখা যাক, চমকের বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নখেকো বিশ্বকাপ নতুন চ্যাম্পিয়ন উপহার দিয়ে শেষ চমক দেয় কি না।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।