ফ্যাশন ডিজাইনার শাহরুখ আমিনের দুনিয়া
পড়াশোনা শেষ করে যখন তিনি ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে এলেন তখন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই মাধ্যমটা অত জনপ্রিয় ছিল না। অনেকটা পথ পার করে ১২ বছর পর তিনি আজ এই জায়গায়। বলা হচ্ছে ফ্যাশন ডিজাইনার শাহরুখ আমিনের কথা। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে এক আলাপে তিনি জানিয়েছেন তাঁর পথচলার কথা।
ফ্যাশনের আমিন, আমিনের ফ্যাশন
কাজের শুরুটা হয়েছিল ‘কারুজ’ নামের একটি ফ্যাশন হাউস দিয়ে। এরপর ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে দুই বছর কাজ করেছিলেন ‘ড্রেসিডেল’-এ। এরপর তাঁর ‘আলমিরা’ ফ্যাশন হাউসের জন্ম। প্রায় ১২ বছর মানে এক যুগ বয়স হয়ে গেল তাঁর ফ্যাশন হাউস ‘আলমিরা’র। এই ফ্যাশন হাউসের একটি বিশেষত্ব হলো এর একটি ডিজাইনের একটি পোশাকই হয়ে থাকে। আর এই ধারার একটু ব্যতিক্রম হলো তার ‘আলমিরা এক্সপ্রেস’ এবং ছেলেদের পাঞ্জাবির জন্য ‘মেলোড্রামা’। দুটোই ‘আলমিরা’ ফ্যাশন হাউসের প্রোডাকশন। যার পার্টনার হলো ‘এক্সটাসি’ ফ্যাশন হাউস। পাঁচ বছর ধরে দুটো ফ্যাশন হাউস একসঙ্গে কাজ করছে। ‘আলমিরা এক্সপ্রেস’ এবং ‘মেলোড্রামা’র পোশাক ‘এক্সটাসি’র সব আউটলেটেই পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি তিনি ‘ক্যানভাস’ ম্যাগাজিনে পাঁচ বছর ফ্যাশন এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশন শোতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন এই দেশীয় ডিজাইনার।
স্মৃতিচারণা
ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির শখ ছিল শাহরুখ আমিনের। সেখান থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনিং পেশায় আসা। সেই সময়ে এ পেশায় আসাটা খুব একটা সুখকর ছিল না তাঁর জন্য। এ সম্বন্ধে তিনি বলেন, ‘সে সময়টাতে ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়টি কারো বোধগম্য ছিল না। তাই খুব একটা সহায়তা কারো কাছ থেকেই পাইনি। তবে সবাই যদি বাধা দিত তাহলে হয়তো এতদূর আসতেও পারতাম না। নিজের ইচ্ছা, মনোবল আর ভালোলাগা থেকেই এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসা।’
প্রিয় ডিজাইনার
অনেক ডিজাইনারকেই পছন্দ করেন শাহরুখ আমিন। কার ডিজাইন সবচেয়ে ভালো লাগে সে সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেশের মধ্যে আমার প্রিয় ডিজাইনার আনীলা হক। যিনি ‘অ্যান্ডাজ’ ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী ছিলেন। বর্তমানে তিনি সুইডেনে থাকেন। হুমায়রা খানের ডিজাইন করা পোশাকও আমার খুব পছন্দের। হুমায়রা খান ‘আনোখী’ ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার। এ ছাড়া দেশের বাইরের ঋতু কুমার, সব্যসাচী মুখার্জি, আলী ভিসান ও রোহিত বালের ডিজাইন করা পোশাক আমার ভালো লাগে।”
নিজের প্রিয় কাজ
‘আমার নিজের কাজ সবই প্রিয় আবার সবই অপ্রিয়। প্রতিটি কাজের পর আমার মনে হয় এই কাজটা আরো ভালো হতে পারত অর্থাৎ এর থেকে আরো ভালো করতে পারতাম। হয়তো এখনো এমন কোনো কাজ আমি করতে পারিনি যা আমাকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিয়েছে। কিছুটা হতাশা থেকেই যায়।’ বললেন শাহরুখ আমিন।
বিশেষ কাজ
দুই বছর ধরে দুটি ফ্যাশন ফটোগ্রাফির সঙ্গে কাজ করেছেন শাহরুখ আমিন। একটি হলো ‘ট্রাইও’, অপরটি ‘দ্য বিউটিফুল ব্রাইড’। এ ছাড়া ‘মেহেরজান’ চলচ্চিত্রে পোশাকের ডিজাইন শাহরুখ আমিনের করা। আর ‘আন্ডারকনস্ট্রাকশন’ সিনেমার পোশাকও ডিজাইন করেছেন তিনি। ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি।
সম্প্রতি কাজ
সম্প্রতি ‘ম্যাক্সি’ নামে একটি আউটফিট তৈরি করা হয়েছে আলমিরা ফ্যাশন হাউসে। নেটের কাপড়ের ওপর এমব্রয়ডারির কাজ করা হয়েছে। এ পোশাকটি এবারের বৈশাখ উপলক্ষে করা হয়েছে।
অবসর এবং ভালোলাগা
কন্যা রাশির এই জাতক অবসরে গান শুনতে ও বই পড়তে ভালোবাসেন। সামিনা চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদার ও ফাহমিদা নবীর গান তাঁর ভীষণ প্রিয়। একটু সময় পেলেই ঘুরে আসেন দেশের বাইরে থেকে। খেতে পছন্দ করেন দেশীয় যেকোনো খাবার। আর ভালোবাসেন কালো রঙের পোশাক।
যাঁরা এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে চান
বর্তমানে অনেকেই ফ্যাশন ডিজাইনকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান। তাঁদের উদ্দেশে শাহরুখ আমিন বলেন, ‘আমরা এখনো এই ইন্ডাস্ট্রিতে সংগ্রাম করছি। পরবর্তী প্রজন্মের যাঁরা এই পেশায় আসতে চান তাঁদের জন্য বলব, এই জায়গাটি অনেক কষ্টের। এখানে নিজস্বতা থাকতে হবে। অন্য কারো ডিজাইন করা পোশাক থেকে শেখার অনেক কিছুই থাকে। কিন্তু তাঁর মতোই ডিজাইন করতে হবে এমন ধারণা থাকা ঠিক নয়। পোশাকের ডিজাইনে নিজস্বতা না থাকলে এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া খুব একটা সহজ নয়।’