অবশেষে পদ্মার বাম তীরে বাঁধ
প্রমত্তা পদ্মার বাম তীর সংরক্ষণে বাঁধ নির্মাণের জন্য পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাসিন্দারা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে। আজ বুধবার সকালে উপজেলার সাড়া ইউনিয়নে ২২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সেই বাঁধ নির্মাণের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ।
পদ্মা নদীর বাম তীর নদীশাসনের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আর্থিক সহায়তায় সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণের এই কাজ শুরু হয়েছে। মোট তিন ধাপে এ কাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা নদীর বাম তীরের ভাঙন থেকে ঈশ্বরদী উপজেলার কোমরপুর থেকে সাড়া-ঝাউদিয়া পর্যন্ত এবং নাটোরের লালপুর উপজেলার তিলকপুর থেকে গৌরীপুর পর্যন্ত এলাকা রক্ষা পাবে বলে আশা করছেন পাউবো কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় ভূমিমন্ত্রী বলেন, চীনের দুঃখ যেমন হোয়াংহো নদী, ঠিক তেমনি সাড়া তথা পশ্চিমাঞ্চলের দুঃখ এই পদ্মা। এক সময় সাড়া ঘাটে স্টিমার চলত। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পিঠস্থল ছিল সাড়া। এখানে নদীবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন ছিল, আরামবাড়িয়ায় বড় বাজার ছিল। থানা হেডকোয়ার্টার ছিল, সাহেবনগর চরে এক হাজার ২০০ পাকা ঘরবাড়ি, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, শহীদ মিনার সবই ছিল। কিন্তু পদ্মার করাল গ্রাসে দিনে দিনে সব বিলীন হয়েছে। হারিয়ে গেছে এক হাজার ২০০ পরিবার।
শামসুর রহমান শরীফ আরো বলেন, আগে ঈশ্বরদী শহরের অস্তিত্ব ছিল না। সাড়া ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। বিদেশিদের আনাগোনা ও স্টিমার জাহাজ ভিড়ত এখানে। যে দৃশ্য বর্তমানে নেই। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার চারঘাট থেকে ঈশ্বরদীর সাড়া ইউনিয়ন এলাকা পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের জন্য ৫৫৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে সেই কাজটি বন্ধ করে দেয়। বর্তমান সরকার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এখানে আবার আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
সাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জমসেদ আলী সরকারের সভাপতিত্বে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক মীর মোশারফ হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিছুন্নবী বিশ্বাস, উপজেলা চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান মিন্টু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনবি) রফিকুল ইসলাম সেলিম, ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মিন্টু প্রমুখ।
পাউবো কর্মকর্তারা জানান, ঈশ্বরদীর কোমরপুর থেকে সাড়া ঝাউদিয়া পর্যন্ত এবং নাটোরের লালপুরের তিলকপুর থেকে গৌরীপুর পর্যন্ত পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ বাঁধের সংশোধিত প্রথম পর্বের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫২ কোটি টাকা। দেড় কিলোমিটার এলাকার এ কাজ চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।
দ্বিতীয় পর্যায়ের দুই কিলোমিটার কাজের জন্য এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং তৃতীয় পর্যায়ের আরো চার কিলোমিটার কাজের দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। এ প্রকল্পের অধীনে সাড়ে সাত কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণকাজে মোট ব্যয় হবে ২২৬ কোটি টাকা।