জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘র্যাগিং’, দুই ছাত্র হাসপাতালে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ভাইদের ‘র্যাগিংয়ে’ প্রথম বর্ষের দুই ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়ার পর সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনে ক্লাসের ফাঁকে বাংলা বিভাগের বড় ভাইদের অতিরিক্ত মানসিক নির্যাতনের কারণে অচেতন হয়ে পড়েন বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদে মানসিক নির্যাতনের কারণে অচেতন হয়ে পড়েন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। এ ঘটনার পর দ্রুত তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাঁদের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসক শ্যামল কুমার শীল জানান, অতিরিক্ত মানসিক নির্যাতনের কারণে দুই শিক্ষার্থী অচেতন হয়ে পড়েন। তাঁরা একাধিকবার বমিও করেছেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ‘বিষয়টি জানি না। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। বিষয়টি জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে প্রক্টর বিষয়টি না জানার কথা বললেও র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘র্যাগিং একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ঘৃণ্য আচরণ দ্বারা ব্যক্তির অপূরণীয় শারীরিক-মানসিক ক্ষতি হতে পারে। র্যাগিং নাগরিক অধিকার পরিপন্থী, বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়া দৈহিক-মানসিক পীড়ন, যেকোনো ধরনের অশোভন আচরণ, কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ বা কর্তব্যকর্ম থেকে বিরত রাখার চেষ্টা বা মতপ্রকাশে বাধাদান, জোরপূর্বক কোনো রাজনৈতিক মতবাদ বা বিশ্বাসে বাধ্য করা এবং রাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত হতে বাধ্য করা, কারো সামাজিক বা মানবিক মর্যাদাহানিকর কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ, ঘুষ বা যেকোনো ধরনের আর্থিক অনাচার, বলপ্রয়োগ- আইনের দৃষ্টিতে অন্যান্য অপরাধ র্যাগিং হিসেবে গণ্য হবে।’
এতে আরো বলা হয়েছে, র্যাগিংয়ের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী আজীবন বহিষ্কারসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় আইনের আওতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হবে। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষ অভিযোগকারীর নাম গোপন রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।